রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।|
ছাত্র মাত্র দুটি চড় দিয়েছে-এ আর এমন কী! ক্লাসে সিসি ক্যামেরা না থাকলে জাতিকে ঘটনা বিশ্বাস করাতে রাম-লক্ষ্মণ একাকার করতে হতো! ক্লাসে এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেল, চড় খেয়ে শিক্ষক দৌড়ে বাইরে পালালো কিন্তু অন্যরা নির্বিকার। সবাই মিলে খাতা দেখাদেখি চলছে। কেউ হাসছে, কেউ কিছুটা ভাবছে। আসলে ভাবনারও কিছু নাই। পাড়ার বড় ভাইরা আছে, রক্ষা করার মত অনেকগুলো বাপ আছে।
শিক্ষার্থীদেরকে কিছু বলার নাই। শিক্ষকতায় আসবেন আর এইটুকু সামান্য নিয়তি মানতে পারবেন না-তা কী করে হয়! ভিডিওটা ডাউনলোড করে গ্যালারিতে রাখবেন কিংবা ফেসবুকের পিনপোষ্ট করবেন। স্কুল-কলেজে যাওয়ার আগে একবার মনোযোগ দিয়ে দেখবেন। ক্লাসে কী পড়াবেন সেটার প্রস্তুতি না নিলেও ক্লাসে আপনার সাথে যেকোন কিছু ঘটতে পারে তেমন মানসিক বল নিয়ে বেশি করে পান্তা খেয়ে বের হবেন! বউ-বাচ্চার কাছে মিনমিনে গলায় বলে আসবেন-যদি না ফিরি আমায় ক্ষমা করো প্রিয়!
শিক্ষক দু'টো চড় খেয়েছে সেটা নিয়ে মোটেই ভাবছি না, দুশ্চিন্তা তো বাদ কি বাত! ভাবছি, বাপকে চড়িয়ে নির্বিকার থাকা যায়, হাসা যায়, বুক ফুলানো যায়-এই শিক্ষাটা আমরা কোথা থেকে পেলাম! নিশ্চয়ই শিক্ষকগণ মহামতি শিক্ষার্থীদেরকে এমন বীরত্বপূর্ণ শিক্ষা এখনো দিতে পারে নি! তবে কি বাইরের মহাত্মন ব্যক্তিবর্গও শিক্ষার্থীদেরকে নানাভাবে ট্রেইনআপ করছে! লক্ষণ হিসেবে এটা সুলক্ষণের বাপ!
রাষ্ট্র শিক্ষকদের শাসন তুলে ভালো করেছে! নয়তো এই শিক্ষার্থীর বিচার বসিয়ে দু'চার ঘা বেত্রাঘাত করা হতো! সেটা খুবই অমানবিক হতো! কোমলপ্রাণে আঘাত করা নিশ্চয়ই মানবিক না। শিক্ষকের বদদোয়ায় শিক্ষার্থীর অকল্যাণ কিছু হবে?-বোকার স্বর্গে আছেন! যদি বেঁচে থাকেন তবে দেখবেন চড় দেয়া ছেলেটি কতদূর যাবে! হয়তো লন্ডন-আমেরিকায় গিয়ে এমপি হয়ে তারপর মন্ত্রীটন্ত্রীও হয়ে যেতে পারে! আর কিছু না হোক-নেতা যে হবে তা নিশ্চিত! যে শিক্ষার্থী শিক্ষককে চড়াতে পারে, আপনি ভাবছেন সেই শিক্ষার্থী শুধু ভাত-মাংস খায়! বোকা রয়ে গেছেন তবে, সমাজ তাকে আরও বলবর্ধক কিছুর নাগাল পেতে সহায়তা করেছে!
শিক্ষকদেরে কাকুতি-মিনতি করে বলবো, আপনি ক্লাসে দু'চার চড় খান তাতে কোন আপত্তি নাই । কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে কেন আনেন! রাষ্ট্রের লজ্জা না হতে পারে কিন্তু আপনার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এবং সহকর্মীরা তো লজ্জিত হয়! শিক্ষকের হাল যে কিঞ্চিৎ বেহাল তা সমাজবাসী জেনে গেলে মহৎ পেশার সুরৎহাল হয়ে যায়-সেটা কি আরও নগ্নভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে! আজকেই ক্লাসরুমের সব সিসি ক্যামেরা খুলে গোডাউনে রাখুন! চড়ে তো আর সম্মান যায়নি কিন্তু সিসি ক্যামেরায় ঠিকঠিক মান খুইয়েছে!
শিক্ষার্থীরা এখন গাড় ত্যারা করে কথা বলতে শিখেছে, শিক্ষকের রুমে এসে টেবিলে থাপ্পড় দিয়ে চেয়ার টেবিলে লাথিগুতা মারতে শিখেছে, কথায় কথায় দেখে নেয়ার হুমকি দিতে শিখেছে-সর্বশেষ চড়িয়ে গাল লাল করে দিতেও শিখেছে! এবার শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানানো যায়, দেয়া যায় গণসংবর্ধনাও! ব্রাশ ফায়ারের কথা একবারও বলছি না-ওসব সেনা-পুলিশ সশস্ত্রের কাজ! শিক্ষক বুঝাবে, বুঝাবে এবং বুঝাবে। তাতে কেবল গাল নয় প্রয়োজনে প্রাণও দেবে!
রাষ্ট্র আরেকটু ভাবতে পারে! আদৌ পরীক্ষা কী কোন কাজের কাজ! পরীক্ষা থাকলে শিক্ষার্থীরা দেখাদেখি করবে। সেখানে শিক্ষক বাঁধা দেবে। শিক্ষার্থী হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করবে! শিক্ষকের গালে-পিঠে লাগবে! অথচ পরীক্ষা না থাকলেও অধম-অবলা শিক্ষকদের জীবন নিয়ে নতুন করে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হতো না। এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের যে, শিক্ষক যতবার পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন তিনি ততবার ফেল করবেন! শিক্ষকের আবার শিরদাঁড়া! চড় ফেরানোর চেয়ে গাল শক্ত করে কিভাবে চড়ের ব্যথা কমানো যায়-সেই তপস্যায় শিক্ষকগণ ব্রতী হোক!
দুঃখিত মাস্টার! এ কাজ ছেড়ে দাও। অন্যকিছু করে জীবিকা নির্বাহ করো। চড় খাওয়ার চেয়ে সেটা অধিক সম্মানের! এখানে কতেকটা পঁচে গেছে বাকিটা পঁচিয়ে দেয়া হয়েছে!
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন