জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত ছোট ও বড় পর্দায় সমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান এবার স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন তার পশুপ্রীতির জন্য। অভিনয়ের মানুষ জয়ার পোষা প্রাণীদের প্রতি ভালবাসার কথা ইতোমধ্যে তাঁর সামাজিক মাধ্যমের ভক্তরা জেনে গেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রভুভক্ত প্রাণীগুলোর প্রতি এই অভিনেত্রীর যত্নশীল মনোভাব ফুটে উঠেছে। অভিনয়ের গন্ডির বাইরে তাঁর এই কার্যক্রমের জন্য তিনি অর্জন করতে যাচ্ছেন ‘প্রাণবিক বন্ধু’ পুরষ্কার।
চলুন, পুরষ্কারটির পাশাপাশি জেনে নিই জয়া আহসানের জনপ্রিয় কাজগুলোর কথা।
জয়া আহসান-এর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার
দুই বাংলার সংবেদনশীল তারকায় পরিণত হওয়া জয়া আহসান-এর দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের বিপুল অর্জন তাকে প্রতিনিয়ত আরও ব্যস্ত করে তুলছে। ২০০৪ সালে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী-এর ব্যাচেলর সিনেমার মধ্য দিয়ে তার বড় পর্দায় আগমন। এরপর ‘গেরিলা’, ‘চোরাবালি’ মুভিগুলোর মাধ্যমে চলচ্চিত্র পাড়ায় বেশ সমাদৃত হন। ব্যবসা-সফল চলচ্চিত্র ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’-১ ও ২-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মূলধারার সিনেমায় তাঁর সপ্রতিভ যাত্রা শুরু হয়।
২০১৩ তে ‘আবর্ত ’সিনেমা দিয়ে শুরু করার পর ভারতীয় মুভিতে নিয়মিত হতে থাকেন জয়া। তাঁর নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সি-তে সিনেমা থেকে ২০১৮ সালে মুক্তি পায় দেশ বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ-এর গল্প অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা ‘দেবী’।
জয়া আহসানের পশুপ্রীতি
২০১৮-এর শীতকালে মা ও বোনকে নিয়ে চার দিনের সিলেট ট্যুরে যান জয়া। এই ভ্রমণের মধ্যমণি ছিলো ক্লিওপেট্টা; জয়া’র পোষা কুকুর, যাকে তিনি পেট্টা বলেই ডাকেন। মুভির শ্যুটিং-এর জন্য পেট্টাকে ছেড়ে তাকে কলকাতায় এক মাস থাকতে হয়েছিলো। তাই দেশে ফিরেই পেট্টার সৌজন্যে এই ভ্রমণ।
জয়ার সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল জুড়ে পেট্টার দুষ্টুমি ভরা ছবির ছড়াছড়ি। তবে প্রিয় পোষা প্রাণীর সাথে সুন্দর কিছু সময় কাটানোর বাইরেও প্রভুভক্ত প্রাণীগুলোর জন্য তার কার্যক্রম ছিলো চোখে পড়ার মত।
রাজধানীর মগবাজার ও ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার ২৫-৩০ টি রাস্তার কুকুরকে নিয়মিত খাবার দিতেন জয়া। করোনা মহামারির মধ্যে তিনি যোগ দিয়েছিলেন পশু অধিকার রক্ষা আন্দোলনে, যার সূত্রপাত ঘটেছিলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈধভাবে প্রায় ৩০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর শহরের বাইরে স্থানান্তর করা থেকে। রাজধানীর পশু প্রেমীদের সাথে একত্রিত হয়ে জয়া আহসান এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
রাস্তার পাশে দেয়াল-লিখন-এর মাধ্যমে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে বাঁচানোর জন্য পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সচেতনতামূলক প্রচারণায় অংশ নেন জয়া।
২০২০ সালের ২৮ থেকে ২৯ আগষ্ট অনুষ্ঠিত সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের ২২ জন তরুণ অভিনয়- শিল্পী পরিচালকদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত মুখটি ছিলেন এই অভিনেত্রী। পরে তিনি ফেসবুকে ‘আমাদের দেবদূত বন্ধুদের মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করুন’ পোস্টের মাধ্যমে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। বেওয়ারিশ কুকুর না ডেকে জয়া কুকুরগুলোকে 'মুক্ত কুকুর' বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রাণবিক বন্ধু জয়া আহসান
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এরকম আয়োজন করছে পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার (পাও) ফাউন্ডেশন। যারা পশুপাখিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন এবং এদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করেন, তাদেরকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেই এধরণের প্রয়াস।
গত বিশ্ব পশু দিবস (৪ অক্টোবর, ২০২০)-এ পাও দশজন ‘প্রাণবিক বন্ধু’ খেতাব অর্জনকারীদের নাম প্রকাশ করে। আগামী নভেম্বর মাসে এদের সবার হাতে এই সম্মাননা স্মারকটি তুলে দেয়া হবে। জয়া আহসান-এর সাথে এই তালিকায় আছেন, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, অধ্যাপক ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, মোল্লা রেজাউল করিম, প্রবীর কুমার সরকার, গ্রেসী পুষ্পিতা সরকার, মরণোত্তর বিশেষ সম্মাননায় রেশাদ কামাল, সুধা রানী, ডা. ফাতিহা ইমনুর ইমা ও মো. আবু বকর সিদ্দিক।
শেষাংশ
এরকম অনেক মানুষই আছেন যারা তাদের আশেপাশের পশুপাখিদের সুস্থ জীবনধারণের জন্য চেষ্টা করেন। তাঁদের এই প্রচেষ্টা প্রায়ই লোক চক্ষুর আড়ালে রয়ে যায়। তাই অভিনেত্রী জয়া আহসানের এই ব্যক্তিগত উদ্যোগ সেই অপ্রকাশিত তারকাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। পাশাপাশি পাও-এর এই মহান পদক্ষেপে প্রাণবিক বন্ধু শিরনামের মানবিকতা ছড়িয়ে যাবে সারা বাংলাদেশে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন