মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের বরাদ্দের টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম

gbn

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি //

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় চা বাগানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত ‘চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২২ টি চা বাগানের ৭ হাজার উপকার ভোগীদের মধ্যে মাথা পিছু ৬ হাজার টাকা হারে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণের পর ওই তালিকায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় নাম থাকলেও অনেক পরিবার টাকা পায়নি, আবার একই পরিবারের তিন, চারজনের নামে বিকাশে টাকা এসেছে। তালিকায় এমন অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বঞ্চিত চা শ্রমিকরা।  

 

 

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বছরের ন্যায় এ বছরোও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর আওতাধিন ২২টি চা বাগানে ৭ হাজার চা শ্রমিককে জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পে অর্ন্তুভুক্তের জন্য পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ উপকারভোগী নামের তালিকা বাছাই করে অফিসে জমা জমা দেন। বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ উপকারভোগী চা শ্রমিকদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও বিকাশ নাম্বার তালিকাভূক্ত করে সমাজসেবা অফিসে জমা দেন। উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে উপকারভোগীর তালিকা যাচাই বাছাই না করে গত জুন মাসে তালিকা অনুযায়ী  উপকারভোগীর মোবাইল বিকাশ নাম্বারে ৬ হাজার টাকা করে পেমেন্ট করা হয়। কিন্তু টাকা প্রদানের পরই তালিকায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে শমশেরনগর, পাত্রখোলা. মাধবপুর ও কুরমা চা বাগানে।  

 

চা বাগানের কিছু কিছু পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ টাকার জন্য নিজেদের পরিবারের স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বোনের নাম ও বিকাশ নাম্বার জমা দিয়েছেন। আবার অনেক দরিদ্র চা শ্রমিক পরিবার সদস্যের নাম ও বিকাশ নাম্বার স্থান পায়নি। এছাড়াও শমসেরনগর চা বাগানে পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক একজনের আইডি কার্ডের তথ্য দিয়ে নিজের ছেলের বিকাশে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ রকম নানা অভিযোগে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

 

গত ২১ জুলাই সোমবার চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নের এই টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে শমসেরনগর চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই ভাবে শমশেরনগর বাগানের শ্রমিক নেতা গোপাল কানু শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা রেলী।

 

 

তালিকায় দেখা যায়, শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক নেতা নির্মল দাস পাইনকার পরিবারে ভাইয়ের স্ত্রী সাবিত্রি পাইনকা, ভাই মানিক পাইনকা, বড় ভাইয়ের স্ত্রী সবিতা পাইনকা, মেয়ে মনিকা বাঈ পাইনকা, শান্তা বাঈ পাইনকা, মিত বাঈ পাইনকার নাম। একইভাবে শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু, স্ত্রী রিনা কানু, ভাইয়ের বউ রিপা কানু, বোন হেমন্তি কানু, ভাই হৃদয় প্রকাশ কানু, ভাইয়ের স্ত্রী শিপা কানুর নাম ও বিকাশ নাম্বার। এছাড়াও চা শ্রমিক সুরনারায়ন রেলী সরাইয়ার পরিবারের ৮ জনের নাম ও বিকাশ নাম্বার পাওয়া যায়।

 

অভিযোগ বিষয়ে মনু-ধলই ভ্যালী কমিটির সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা বলেন, ‘আমার জীবনে এভাবে কখনো হয়নি। তবে অসুস্থতায় চিকিৎসার কথা বলেছিলাম। তাই পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ আমার পরিবারের তালিকা দিয়েছে। এজন্য আমি খুবই দু:খিত।’  

 

 

শমশেরনগর চা বাগানের বড়লাইনের শ্রমিক রামাকান্ত যাদব বলেন, ‘তালিকায় আমার নাম ও ভোটারআইডি নাম্বার ঠিক আছে। টাকা আমি পাইলাম না। বিকাশ নাম্বার আমার নয়। আমি মেম্বাররে কইলাম আমার টাকা পাইলাম না।’ একই বাগানের শ্রমিক পারতালি তেলেঙ্গা, আদমটিলার শ্রমিক দুলাল শীল, রবিদাস টিলার প্রিতী পাল বলেন, আমাদের নাম, আইডি ও বিকাশ নাম্বার তালিকায় রয়েছে। অথচ টাকা আমরা পাইনি। শমসেরনগর চা বাগানের মুক্তা গোয়ালা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলেও টাকা চলে গেছে কানিহাটি চা বাগানের আরেকজনের মোবাইলে।

 

 

শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল বলেন, ‘তালিকা দিয়েছেন অনেকেই। যে যেভাবে তালিকা দিয়েছে, সেভাবে টাকা আসছে। আমার ছেলের বিকাশে যার টাকা আসছে, সে-ই আমার ছেলের নাম্বার দিয়েছে। আমার পরিবারে দু’জনের নামে টাকা এসেছে। ভাইয়েরা তো আলাদা পরিবার। তারাও তো প্রাপ্য।’

 


উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইউসুফ মিয়া বলেন, এধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, চা শ্রমিকদের অভিযোগ পেয়েছি। সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন