সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় সুদানের আবেইতে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে আজ শনিবার। মাতৃভূমিতে ফেরার পর যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ বহনকারী বিমানটি বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় উগান্ডার এন্টেব বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দিয়ে আজ শনিবার সকাল সোয়া ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটির অবতরণের কথা রয়েছে।
এ ঘটনায় আহত আরো আটজন শান্তিরক্ষী বর্তমানে কেনিয়ায় চিকিত্সাধীন এবং তাঁরা শঙ্কামুক্ত বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী।
গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সময় আনুমানিক বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিটের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী ঘাঁটিতে আকস্মিক ড্রোন হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জীবন উত্সর্গ করা এই ছয় শহীদ শান্তিরক্ষী হলেন করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শান্ত মণ্ডল (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।
আহতদের বর্তমান অবস্থা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলায় আহত আটজন শান্তিরক্ষীকে দ্রুততম সময়ে উন্নত চিকিত্সার জন্য কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তাঁরা হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা), সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), সৈনিক মোসাম্মত্ উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), সৈনিক চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) এবং সৈনিক মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)। আহতদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
এ ছাড়া অন্যরা শঙ্কামুক্ত। তাঁদের মধ্যে একজন চিকিৎসা শেষে এরই মধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ সদস্য নিয়ে শান্তি রক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। তবে শান্তির এই পথ সব সময় মসৃণ ছিল না।
এ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন বীর সদস্য (সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ) বিশ্বশান্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুদানের মরুভূমিতে ঝরে যাওয়া এই ছয়টি প্রাণ সেই ত্যাগের মিছিলে নতুন নাম, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পতাকাকে আরো মহিমান্বিত করেছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন