ট্রাম্পের সফরে কী পেল জাপান-যুক্তরাষ্ট্র

gbn

জাপানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রশংসা, নোবেল মনোনয়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে দেন।

ট্রাম্পও তাকাইচির উষ্ণ প্রশংসা করেন এবং তাকে বলেন, ‘জাপানকে সাহায্য করার জন্য আপনি যা চান, আপনার যেকোনো অনুগ্রহ প্রয়োজন, যেকোনো কিছুর জন্য...’ যুক্তরাষ্ট্র সেখানে থাকবে।

দুই নেতা একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তি স্বাক্ষর করেন, সেইসঙ্গে মার্কিন-জাপান সম্পর্কের নতুন ‘স্বর্ণযুগ’ ঘোষণা করে একটি নথিতে স্বাক্ষর করেন, যেখানে চলতি বছরের শুরুতে সম্মত হওয়া ১৫ শতাংশ শুল্ক চুক্তিসহ অন্যান্য পূর্ববর্তী চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

আড়ম্বরপূর্ণ এই অনুষ্ঠান এবং স্থানটিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য যেন বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল।

 

একটি পূর্ণ সামরিক গার্ড অব অনার এবং ব্যান্ড ট্রাম্পকে অলঙ্কৃত আকাসাকা প্রাসাদে স্বাগত জানায়। প্রাসাদটির উঁচু ছাদ এবং সোনা-খচিত দেয়াল অনেকটা তেমনই, যেমনটি প্রেসিডেন্ট তার পরিকল্পিত হোয়াইট হাউস বলরুমে চেয়েছিলেন।

মধ্যাহ্নভোজের সময়, হোয়াইট হাউসের বিবরণ অনুসারে যা ছিল ‘জাপানি উপাদান দিয়ে সুস্বাদুভাবে তৈরি আমেরিকান ভাত ও আমেরিকান গরুর মাংস’, ট্রাম্প জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকাইচিকে অভিনন্দন জানান। 

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে জাপানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাল কেনার দাবি জানিয়ে আসছেন।

 

তাকাইচি একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী, ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন-এও ট্রাম্পের সঙ্গে যান, যেখানে হাজার হাজার উল্লসিত আমেরিকান সেনা তাদের অভিবাদন জানায়। তাকাইচি মঞ্চে উঠে এটিকে ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জোট’ বলে প্রশংসা করেন এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন।

ট্রাম্প অতীতে জাপানের অপর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সমালোচনা করেছিলেন। এই বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তিকে ‘একতরফা’ বলে সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘তাদের রক্ষা করার জন্য আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিই, কিন্তু তারা কিছুই দেয় না।

 

বুধবারের বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, তিনি নিশ্চিত যে তাকাইচির সঙ্গে তার ‘চমৎকার সম্পর্ক’ হবে, কারণ তিনি ট্রাম্পের প্রিয় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সংযোগ বজায় রাখতেন।

মালয়েশিয়া থেকে জাপানে আসার সময় মঙ্গলবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (তাকাইচি) আবের একজন দুর্দান্ত মিত্র ও বন্ধু ছিলেন, যিনি আমার বন্ধু ছিলেন... তিনি অন্যতম সেরা ছিলেন।... আমি জানি তারা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং আমি মনে করি ধারণাগতভাবেও তারা ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যা খুবই ভালো।’

ট্রাম্প এক সপ্তাহের জন্য এশিয়ায় রয়েছেন এবং বুধবার জাপান ছেড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে বৃহস্পতিবার তার চীনা নেতা শি চিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।

 

এই বৈঠকটি তাকাইচির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি এই মাসের শুরুতে জাপানের আইনপ্রণেতাদের দ্বারা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

তাকাইচি বুধবার ট্রাম্পকে ‘একটি নতুন স্বর্ণযুগের অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, জাপান তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করবে।

ট্রাম্পের সহকারী মার্গো মার্টিনের মতে, তিনি ট্রাম্পকে গলফ সম্পর্কিত উপহারের একটি সংগ্রহও দেন। এর মধ্যে রয়েছে: গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা প্রথম জাপানি পুরুষ গলফার হিদেকি মাৎসুয়ামা স্বাক্ষরিত একটি গলফ ব্যাগ, সেইসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবে ব্যবহৃত একটি পুটার। তারা দুজন ‘জাপান ইজ ব্যাক’ লেখা দুটি ক্যাপেও স্বাক্ষর করেন।

ট্রাম্পও তাকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং জাপানের সঙ্গে মার্কিন জোটকে ‘এক ভয়াবহ যুদ্ধের ছাই থেকে জন্ম নেওয়া একটি সুন্দর বন্ধুত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেন।

এখন পর্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ আলোচনায় একটি ইতিবাচক সুর তৈরি করেছে, কিন্তু হাসি এবং আড়ম্বরের আড়ালে জাপানের ওপর বাস্তব চাপ রয়েছে। ট্রাম্প জাপানের বাজারে আরো বেশি প্রবেশাধিকার চান—বিশেষ করে গাড়ি, কৃষি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে। তিনি জাপানকে আরো বেশি আমেরিকান চাল ও সয়াবিন কিনতে এবং মার্কিন যানবাহনের জন্য তার বাজার উন্মুক্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

টোকিও রপ্তানির ওপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল এবং শুল্কের লড়াই সামলানোর ক্ষমতা তাদের নেই, বিশেষ করে যখন এটি তাদের অটো শিল্পে আঘাত করে। যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের বৃহত্তম রপ্তানিকারক অটো নির্মাতাদের একসময় ২৪ শতাংশ শুল্ক এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। বর্তমানে এই শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এই অঞ্চলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কার্যকরী মধ্যাহ্নভোজের সময়, তাকাইচি ট্রাম্পকে একটি মানচিত্র দেখান যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি কম্পানিগুলোর বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে। ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটনে তার ভাষণের সময় ট্রাম্প বলেন, তাকাইচি তাকে আগেই জানিয়েছিলেন, টয়োটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘সর্বত্র’ প্ল্যান্ট তৈরির জন্য ১০ বিলিয়ন বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

কিন্তু তাকাইচিকে অভ্যন্তরীণ শিল্পগুলোকেও রক্ষা করতে হবে এবং দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ গোষ্ঠীগুলোকেও ক্ষুব্ধ করতে চান না।

শিনজো আবের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা তোমোহিকো তানিগুচি বলেন, আবের সঙ্গে তার প্রয়াত পরামর্শদাতার সম্পর্ক থেকে তাকাইচির শেখার অনেক কিছু আছে। তিনি বলেন, তাকাইচির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, তিনি যেন ‘স্পষ্টবাদী হন এবং জাপানের জাতীয় স্বার্থ কী তা স্পষ্ট করে বলেন এবং দেখতে হবে যে দুটি দেশের জাতীয় স্বার্থ কোথায় মিলে যায় ও সর্বদা মনে রাখতে হবে যে জাপানের নিরাপত্তা অবশ্যই জাপানিদের হাতে থাকতে হবে।’

তবে তাকাইচিকে কেবল জাপানের স্বার্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার জোটের মধ্যেই ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে না—তাকে চীনের সঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারি বজায় রেখেও এটি করতে হবে।

এশিয়া গ্রুপের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট রিনতারো নিশিমুরা বলেন, ‘তাকাইচিকে একটি খুব সূক্ষ্ম রেখা ধরে হাঁটতে হবে, হয়তো চীনের বিষয়ে তার কিছু আক্রমণাত্মক প্রবণতা কমাতে হবে... কিন্তু একই সঙ্গে ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করতে হবে যে মার্কিন-জাপান সম্পর্কই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন