ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার জাতিসংঘে ভাষণে ন্যাটোর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন, যিনি হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করে বলেছেন—তিনি মনে করেন রাশিয়াকে পরাজিত করা সম্ভব।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জেলেনস্কি বলেছেন, ন্যাটো সদস্যপদ পেলেও নিরাপত্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দুর্বল, তাই এই উন্মাদনা চলছে।
দীর্ঘদিনের সামরিক জোটের অংশ হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না।’
তবে ট্রাম্পের সঙ্গে মঙ্গলবারের বৈঠককে তিনি ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেন। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো বৈঠক হয়েছে। আরো অনেক শক্তিশালী নেতার সঙ্গেও কথা বলেছি।
একসঙ্গে আমরা অনেক কিছু বদলাতে পারি।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমরা সব কিছু করছি যাতে ইউরোপ সত্যিই সাহায্য করে, আর অবশ্যই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করি।’
ট্রাম্প মঙ্গলবার ইঙ্গিত দেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সমর্থন পেলে কিয়েভ বিজয়ী হতে পারে। এটি ছিল এক নাটকীয় পরিবর্তন, কারণ এর আগে মাসের পর মাস ধরে তিনি বলে আসছিলেন—রাশিয়া যে ইউক্রেনের জমি দখল করেছে, তা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।
ট্রাম্প এমনকি বলেন, ইউক্রেন সব জমি পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং ইঙ্গিত দেন, তারা হয়তো ‘এর থেকেও বেশি কিছু অর্জন করতে পারে!’
এটি তার নীতিগত সর্বশেষ অবস্থান বদলের উদাহরণ। এর আগে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার দিকে হঠাৎ ঝুঁকেছিলেন, যা মিত্রদের হতবাক করেছিল।
জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, ‘ইউরোপ কোনোভাবেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মলদোভাকে রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে হারাতে পারবে না। রাশিয়া মলদোভার সঙ্গে তাই করছে, যেমন ইরান একসময় লেবাননের সঙ্গে করেছিল। আর বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয়।
আমরা ইতিমধ্যেই জর্জিয়াকে হারিয়েছি… বহু বছর ধরে বেলারুশও রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইউরোপ আর মলদোভাকেও হারাতে পারে না।’
সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র মলদোভা আগামী রবিবার নির্বাচনে যাচ্ছে। ইইউপন্থী প্রেসিডেন্ট মাইয়া সানদু সেখানে রাশিয়া-সম্পর্কিত ডিপফেক ভিডিও ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মুখে লড়ছেন।
জেলেনস্কি আরো সতর্ক করেন স্বয়ংক্রিয় ড্রোন ও মানবহীন যুদ্ধযান নিয়ে, যা অন্য ড্রোন গুলি করে নামাতে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো টার্গেট করতে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র প্রতিযোগিতার মধ্যে আছি, কারণ এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। একমাত্র বাস্তব নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হলো বন্ধু ও অস্ত্র।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যদি পৃথিবী সব হুমকির জবাব দিতে না পারে, আর যদি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামো না থাকে, তাহলে পৃথিবীতে কোনো শান্তি অবশিষ্ট থাকবে কি?’
জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানরত জেলেনস্কি আরো বিভিন্ন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠকের ব্যস্ত সূচি সামলাচ্ছেন।
তিনি জানান, ‘ইউক্রেনকে নিজেদের সামরিক উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হতে হয়েছে। ইউক্রেনের সেই বড় মোটা ক্ষেপণাস্ত্র নেই, যা স্বৈরশাসকেরা প্যারেডে দেখাতে ভালোবাসে। তবে আমাদের আছে ড্রোন, যা দুই হাজার থেকে তিন হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। বাঁচার অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের এগুলো বানাতে হয়েছে।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন