গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে নেপাল। সরকারি অদক্ষতা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থেকেই এ আন্দোলন হলেও, এর সঙ্গে রয়েছে ‘নেপো কিডদের’ বিলাসবহুল জীবনযাপনও।
মূলত জেন-জিদের নেতৃত্বে হওয়া এ আন্দোলনের চাপেই প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আন্দোলন দমাতে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫১ জন নিহত ও এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
এই অস্থিরতার কেন্দ্রে রয়েছে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ। যেখানে সাধারণ নেপালি জনগণ বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি আর চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছে, সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা বা তথাকথিত ‘নেপো কিডরা’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিলাসবহুল গাড়ি, দামি হ্যান্ডব্যাগ আর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ প্রদর্শন করছে।
টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, রেডিট ও এক্সে ভাইরাল হয়েছে এমন ভিডিও ও পোস্ট যেখানে এই সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনধারা সাধারণ নেপালিদের দুঃসহ জীবনযাত্রার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ‘পলিটিশিয়ান্স নেপো বেবি নেপাল’ ও ‘নেপো বেবিস’ হ্যাশট্যাগ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ খাঁতিওয়াড়ার মেয়ে ও প্রাক্তন মিস নেপাল শৃঙ্খলা খাঁতিওয়াড়া এ প্রজন্মের ক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তার ভ্রমণ ও বিলাসী জীবনধারার ছবি ভাইরাল হলে আন্দোলনকারীরা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ইনস্টাগ্রামে এক লাখেরও বেশি অনুসারী হারিয়েছেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ জনপ্রিয় গায়িকা শিভানা শ্রেষ্ঠা প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমে বিলাসবহুল বাড়িঘর ও ফ্যাশন প্রদর্শন করেন।
তিনি ও তার স্বামী জয়বীর সিং দেউবা আন্দোলনকারীদের নিশানায় পড়েছেন।
এ ছাড়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল প্রচণ্ডর নাতনি স্মিতা দাহাল এবং আইনমন্ত্রী বিন্দু কুমার ঠাকুরের ছেলে সৌগত ঠাকুরও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন তাদের আড়ম্বরপূর্ণ জীবনধারার কারণে।
আন্দোলনকারীরা স্লোগান তুলেছে, ‘সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যে মারা যাচ্ছে, আর এই নেপো কিডরা লাখ টাকার পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, নেপাল এশিয়ার অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদীয় তদন্তে পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অন্তত ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে।
আবার ভুটান থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ কোটাও রাজনৈতিক নেতাদের বেচাকেনার অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু এসব কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেলেও খুব কম ক্ষেত্রেই বিচার হয়, যা জনসাধারণের মধ্যে রাজনীতিবিদদের দায়মুক্তির বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করেছে।
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর ৭৩ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করেন। একে একে মন্ত্রীরাও সরে দাঁড়ান। দেশ এখন কার্যত নেতৃত্বহীন।
রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল জনগণের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এদিকে সংসদ ও মন্ত্রিসভা না থাকায় সেনাবাহিনী কাঠমাণ্ডুসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করেছে। রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনারা, আর অধিকাংশ এলাকায় জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন