গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনি শিশুদের পক্ষে কথা বলার জন্য মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের প্রতি মার্কিন ফার্স্ট লেডির সমর্থনের প্রশংসা করে এমিন এরদোগান ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।
শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক চিঠিতে এমিন এরদোয়ান বলেন, গাজা এখন ‘শিশুদের সমাধিক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছে। তিনি মেলানিয়া ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে বলেন, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বর এবং শক্তি একত্রিত করতে হবে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মূল্যায়ণ করেছেন যে, গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পাঁচ লাখ মানুষ এবং ১ লাখ ৩২ হাজার শিশুর জীবন অপুষ্টির কারণে হুমকির মুখে রয়েছে।
এসব তথ্য সামনে আসার পরই মেলানিয়া ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছেন এমিন এরদোয়ান। গাজার হাজার হাজার শিশুর কাফনে লেখা ‘অজানা শিশু’। এটি আমাদের বিবেকে অপূরণীয় ক্ষত তৈরি করছে। চিঠিতে এমিন এরদোয়ান মেলানিয়া ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যুদ্ধে প্রাণ হারানো ইউক্রেনীয় শিশুদের প্রতি আপনি যেভাবে সংবেদনশীলতা দেখিয়েছেন, গাজার প্রতিও একই সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করার আহ্বান জানাচ্ছি।
গাজায় মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে সরাসরি আবেদন করার জন্য মেলানিয়া ট্রাম্পকে তিনি উৎসাহিত করেছেন। চলতি মাসের শুরুতে মেলানিয়া ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন যেখানে তিনি শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
তুরস্কের ফার্স্ট লেডি সাধারণত রাজনীতিতে নিজেকে জড়ান না বরং পরিবেশগত বিষয়ে সক্রিয় থাকাকেই প্রাধান্য দেন তিনি। এজন্য জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের প্রশংসাও কুড়িয়েছে তিনি। এর আগে তিনি ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধে আটকে পড়া সিরীয় জনগণের পক্ষে এবং গত মার্চে গাজায় ইসরায়েলি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
গত শুক্রবার জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এখন ক্ষুধা, চরম দারিদ্র্য ও মৃত্যুর মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনে আইপিসি উল্লেখ করেছে যে, খাদ্য ঘাটতির ফলে শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। গাজার প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন শিশুই তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখ ৩২ হাজার শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় অপুষ্টিতে মারা যাওয়া ২৮১ জনের মধ্যে ১১৪ জনই শিশু। ইসরায়েলও গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা অস্বীকার করেছে। তবে তারা আইপিসি বিশেষজ্ঞদের পক্ষপাতদুষ্ট, দুর্ভিক্ষ মূল্যায়নের পদ্ধতি পরিবর্তন এবং হামাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। যদিও আইপিসি এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৬২ হাজার ১২২ জন নিহত হয়েছে। গাজার বেশিরভাগ বেশিরভাগ মানুষই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৯০ শতাংশের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন