২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার ১১ জন স্বামীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইরানি এক নারীর বিরুদ্ধে। মামলা এখন গড়িয়েছে আদালতে। অভিযুক্ত নারীর নাম কোলসুম আকবারি। সরকারি নথি অনুযায়ী তার বয়স এখন ৫০-এর শেষ দিকে, তবে ভুক্তভোগীদের পরিবার দাবি করছে, তিনি আরো বেশি বয়স্ক।
কোলসুম আকবারির বিরুদ্ধে ১১টি প্রথম ডিগ্রির হত্যা এবং ১টি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, আকবারি ২০০১ সাল থেকে শুরু করে একে একে স্বামীদের বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ। তার লক্ষ্য ছিল উত্তরাধিকার এবং বিবাহ-পরবর্তী দেনা-পাওনা আদায় করা। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি বয়স্ক পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু বানাতেন, তাদের সঙ্গে বিয়ে করতেন এবং ধীরে ধীরে বিষ প্রয়োগ করতেন।
আদালতে প্রসিকিউটররা বলেন, ‘আসামি খুব দক্ষতার সঙ্গে নিজের চিহ্ন মুছে ফেলতেন। অধিকাংশ ভুক্তভোগীকে তাদের বয়স ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে বলে মনে হতো, যা তাকে কয়েক দশক ধরে বিনা সন্দেহে এই কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’
ইরানি পত্রিকা হাফতে সাবহ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে আজিজুল্লাহ বাবায়ি নামে এক প্রবীণ ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর পর তার পরিবার তদন্তের দাবি তোলে। বাবায়ি কিছুদিন আগেই আকবারিকে বিয়ে করেছিলেন, তবে পরিবার তাকে তেমন চিনত না।
তার ছেলে পত্রিকাটিকে বলেন, তারা বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং ময়নাতদন্তের আবেদন জানান। যদিও তখন কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
এরপর এক পারিবারিক বন্ধুর বয়ান থেকেই তদন্তে গতি আসে। ওই বন্ধুর বাবাও একসময় কোলসুম আকবারিকে বিয়ে করেছিলেন এবং একবার তাকে বিষ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান এবং পরবর্তী সময়ে তাকে তালাক দেন।
এরপরই তদন্তকারীরা পুরনো ঘটনার সঙ্গে মিল খুঁজে দেখতে শুরু করেন।
আকবারি বিভিন্ন সময়ে ডায়াবেটিস ও যৌনক্ষমতা বৃদ্ধির ওষুধ, এমনকি শিল্প ব্যবহারের অ্যালকোহল মিশিয়ে স্বামীদের ধীরে ধীরে দুর্বল করে তুলতেন। এক ঘটনায়, অজ্ঞান করার পর ভেজা তোয়ালে দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। আরেকজন স্বামী সাময়িকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও, তাকে বারবার ওষুধ দিয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। প্রতিটি হত্যার পর, আকবারি স্বামীর উত্তরাধিকার বা দেনমোহরের টাকা দাবি করতেন। প্রথম হত্যাটি ২০০১ সালে সংঘটিত হয়েছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
আকবারিকে পরে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি হত্যাগুলোর স্বীকারোক্তি দেন। তবে আদালতে প্রথমে দায় স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। তদন্তের পর তিনি স্বীকারোক্তিতে এর সত্যতা মেনে নেন, তবে ঘটনাগুলোর বিবরণ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এই মামলাটি আরো আলোচনার জন্ম দেয় যখন ৪৫ জনেরও বেশি ব্যক্তি (মূলত ভুক্তভোগীদের আত্মীয়রা) মামলার বাদী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। আদালতে চারজন নিহতের পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন। বাকিরা পরবর্তী শুনানিতে তাদের দাবি জানাবেন।
আকবারির আইনজীবী তার মানসিক অবস্থা যাচাইয়ের দাবি জানালেও, এক ভুক্তভোগীর আত্মীয় তা খারিজ করে বলেন, ‘কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি এত পরিকল্পিতভাবে এতগুলো পরিবারকে ঠকাতে পারে না।’ শুনানি শেষ হওয়ার পর বিচারকরা এখন রায় ঘোষণার জন্য পর্যালোচনার কাজ শুরু করবেন।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন