মোহাম্মদ আবু আল কুমসান কেঁপে উঠলেন, কিছুই বিশ্বাস হচ্ছিল না তার। সেন্ট্রাল গাজার আল আকসা শহীদ হাসপাতালের আঙিনায় নিস্তেজ হয়ে পড়ার আগে তার চোখ পানিতে ভিজে উঠেছিল। ইসরায়েলি হামলায় তার দুই নবজাতক যমজ শিশু ও তাদের মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই যমজ শিশুর বয়স মাত্র তিন দিন।
গত শনিবার গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে জন্ম হয়েছিল তাদের।
গতকাল মঙ্গলবার চিকিৎসা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে চিৎকার করে কুমসান বলছিলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি... আমি আপনাকে অনুরোধ করছি... আমাকে তাদের দেখতে দিন। ওরা মাত্র পৃথিবীতে এসেছে, দয়া করে আমাকে তাদের দেখতে দিন।’ নিহত ওই যমজ নবজাতকের একজন ছেলে শিশু ও অন্যজন মেয়ে শিশু।
ইসরায়েলি হামলার কিছু আগে ফিলিস্তিনি এই পিতা তার তিন দিন বয়সী যমজ সন্তান আইসাল এবং আসের জন্মসনদ সংগ্রহ করার জন্য দেইর আল-বালাহে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়েছিলেন। এরপরেই তিনি একটি ফোন পান এবং জানতে পারেন তার বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। হামলায় তার স্ত্রী জুমানাসহ যমজ দুই শিশুও নিহত হয়েছেন। খবর পেয়েই আল-কুমসান ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত দেইর আল-বালাহের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন।
সিএনএন-এর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আল আকসা হাসপাতালে বাবা আল কুমসানের চারপাশে মানুষ জড় হয়েছে। নিঃস্ব এই বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তিনি শোকে এতটাই ভেঙ্গে পড়েছেন যে, ভিডিওতে তাকে জ্ঞান হারাতেও দেখা যায়।
হাসপাতালের কর্মকর্তাদের মতে, এই এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় নয় মাস বয়সী শিশুসহ অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কুমসানের স্ত্রী এবং যমজ শিশুও ছিল।
তার স্ত্রী একজন একজন ফার্মাসিস্ট ছিলেন। হামলা সম্পর্কে সিএনএন ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আল কুমসান সিএনএনকে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বোমা হামলা থেকে তার অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্য দেইর আল-বালাহতে একটি অ্যাপার্টমেন্টে চলে এসেছিলেন। এখানে যমজ শিশুর জন্মের পর স্ত্রী জুমানা সন্তানদের আগমনের সংবাদ ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তিনি এই ঘটনাকে ‘অলৌকিক ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর আগে গত গ্রীষ্মে এই দম্পতি বিয়ে করেছিলেন। আল কুমসান ও জুমানা এই প্রথম বাবা-মা হন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তাদের বিয়ে নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছিলেন কুমসানের স্ত্রী। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘একসঙ্গে চিরকালের জন্য।’ তবে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় সব শেষ হয়ে গেছে।
কুমসান বলেন, ‘তারা গত ১০ আগস্ট জন্মেছিল। আমি বাড়ির বাইরে ছিলাম। তারপরে আমি একটি ফোনকল পেলাম... আমি ভাবতে পারিনি যে সব হারিয়ে গেছে।’ এ সময় তার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। শোকাহত এই বাবা বলছিলেন, ‘আইসাল এবং আসের ছিল আমার আনন্দের শুরু এবং শেষ, আমার আনন্দ চলে গেছে।’
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে যার মধ্যে ১৬ হাজার ৪০০-এর বেশি শিশু, ১১৫ জন নবজাতক। এ ছাড়া ৯২ হাজারের বেশি আহত হয়েছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন