শাহীন গোলদার,সাতক্ষীরা
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সব জিনিসের দাম বাড়লেও কমেছে কোরবানির চামড়ার দাম। অথচ একই সময়ে বেড়েছে জুতা-স্যাণ্ডেলসহ সব ধরনের চামড়াজাত পণ্যের মূল্য। চামড়ার পড়তি দরের পেছনে ট্যানারি মালিক সিণ্ডিকেটের কারসাজিরও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম বাড়লেও দেশের চামড়ার বাজার চীন কেন্দ্রিক ও প্রতিযোগিতাহীন হয়ে পড়ায় বিশেষ সিণ্ডিকেটের কারণে চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কোরবানিদাতা ও মসজিদ-মাদ্রাসা গুলো।
ঈদের পর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে প্রতিবেশি দেশ ভারতে চামড়া পাচার রোধে সাতক্ষীরার ২৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি ও পুলিশসহ আইন-শৃখংলা বাহিনী।
সূত্রমতে, সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তিনটি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে ২৭৮ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সীমান্তের প্রায় ৩০টি চোরা ঘাট দিয়ে মানবপাচার ও চামড়াসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। দেশে সবচেয়ে বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহায়। এ সময় দেশে বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি করা হয়, যা থেকে সারা বছরের অন্তত ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয়। আবার এই সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও পাচারকারী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে কাঁচা চামড়া।
সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি সূত্র জানায়, ঈদের পরে পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। চোরাই পথে গরু আমদানি ও চামড়া পাচার প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, একটা চামড়া প্রস্তুত করতে শ্রমিক মজুরি, লবণ, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০০ টাকা পড়ে। সরকার একটা চামড়ার দাম এক হাজার টাকা বেধে দিলেও, বড় গরু ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং মাঝারি ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় কিনতে পারবেন। বাজারের এ অবস্থায় তারা এবার ছাগল বা বকরির চামড়ার মূল্য দিতে পারবেন কি-না, জানি না।
সাতক্ষীরার চামড়া ব্যবসায়ী অনিল কুমিার দাশ জানান, ট্যানারি মালিক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকরা সময়মতো বকেয়া পরিশোধ না করায় এবারও সাতক্ষীরায় কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নামতে পারে আশঙ্কা করছে ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর কুরবানির ঈদের সময় পাড়া-মহল্লায় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বাড়ে। তারা ব্যবসা না বুঝেই চামড়া কিনে থাকেন। তিনি অবশ্য চামড়া বাজার ধসের জন্য ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধ না করাকে বেশি দায়ী করেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী বলেন, চামড়া পাচার রোধে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সীমান্তের সড়কে কোনো চামড়াবাহী যানবাহন ঢুকতে পারবে না। অন্য জেলা থেকেও চামড়াবাহী কোনো যানবাহন সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরা জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের সংগৃহীত চামড়া যশোর ও ঢাকার আড়ত এবং ট্যানারিতে নিয়ে যেতে পারবেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, জাতীয় সম্পদ চামড়া যেন নষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কুরবানিদাতাদের স্বার্থে সরকার এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার মূল্য ৫-৭ টাকা বৃদ্ধি করেছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম হবে এক হাজার ২০০ টাকা ও সাতক্ষীরা জেলা পর্যায়ে দাম হবে এক হাজার টাকা।##

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন