‘ইসলামিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন’, ২ টিভি চ্যানেল বন্ধ করল তালেবান

‘ইসলামিক ও জাতীয় মূল্যবোধ লঙ্ঘনের জন্য’ দুটি আফগান টেলিভিশন চ্যানেলকে সম্প্রচার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তালেবান সরকারের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার এ কথা বলেছেন বলে এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খুবাইব গুফরান বলেছেন, ‘সাংবাদিক নীতিমালা’ মেনে চলতে ব্যর্থতার জন্য মঙ্গলবার ‘বড়িয়া’ ও ‘নূর’ টিভি চ্যানেল দুটি স্থগিত করা হয়েছে।

 

তিনি এএফপিকে আরো বলেন, ‘তাদের (চ্যানেল) এমন অনুষ্ঠান ছিল, যা জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং তাদের মালিকরা বিদেশে রয়েছে।

গণমাধ্যম লঙ্ঘন কমিশন তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।’

 

মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘তাদের (চ্যানেল) মালিকরা এমনকি তালেবান সরকারের বিরোধী হিসেবে অবস্থান নিয়েছে’ এবং ‘যতক্ষণ না তাদের মালিকরা এখানে আসবে ও জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের উত্তর না দেবে, ততক্ষণ তাদের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে’।

 

অধিকার পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন, তালেবান কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দমন করছে। কারণ তারা ইসলামী শাসনের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করছে।

 

আফগানিস্তান জার্নালিস্ট সেন্টার (এএফজেসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, আফগানিস্তানের গণমাধ্যম কমিশন তালেবান সরকার সম্পর্কে একসময়ের ক্ষমতাধর যুদ্ধবাজ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের মন্তব্য সম্প্রচারের জন্য বারবার ‘বারিয়া’কে সতর্ক করেছে। এ ছাড়া সংগীত সম্প্রচার এবং নারী উপস্থাপকদের অনাবৃত মুখ দেখানর জন্য ‘নূর’ চ্যানেলও সতর্কতা পেয়েছিল।

এএফপি জানিয়েছে, ‘বাড়িয়া’ চ্যানেলটির মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেকমতিয়ারের ছেলে হাবিবুর রহমান হেকমতিয়ার। তিনি নির্বাসনে আছেন।

তাঁর বাবার সঙ্গে তালেবান কর্তৃপক্ষের ক্রমবর্ধমান মতানৈক্য দেখা যায়। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে বলেছেন, ‘বারিয়ার মনে ধর্মীয় ও জাতীয় মূল্যবোধ ছিল, তালেবান মূল্যবোধ নয়। আপনি আমাদের কাছ থেকে শুধু নীরবতা দেখতে পাবেন না।’

 

এ ছাড়া ‘নূর’ চ্যানেলটি সালাহউদ্দিন রব্বানীর মালিকানাধীন, যিনি নির্বাসিত জীবন যাপন করেন এবং ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাবেক মার্কিন সমর্থিত সরকারের অধীনে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাবা বুরহানউদ্দিন রব্বানী নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

কিন্তু তালেবানরা প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শাসন করার সময় তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি ২০১১ সালে বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন। হামলাকারী তালেবান শান্তি দূত হিসেবে নিজেকে জাহির করেছিলেন।

 

এএফজেসি বলেছে, দুটি চ্যানেলের স্থগিতাদেশ ‘দেশের গণমাধ্যম আইন লঙ্ঘন করে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে দমন করার একটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা’।

গণমাধ্যমটির তথ্য অনুসারে, তালেবান কর্তৃপক্ষের প্রবর্তিত নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকরভাবে সংগীতকে নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের মে মাসে নারী টিভি উপস্থাপকদের মুখ ঢেকে রাখার জন্য একটি আদেশ জারি করেছিল।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) গত মাসে বলেছে, আফগানিস্তানের গণমাধ্যমগুলোর ‘তালেবানের দমনমূলক নির্দেশে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে’।

২০২১ সালের আগস্টে বিদেশি সমর্থিত সরকারের পতনের পর তালেবানের দুই দশকের বিদ্রোহের অবসান হওয়ায় অনেক সাংবাদিক তাঁদের করা প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যান। যাঁরা রয়ে গেছেন, তাঁদের অনেককে তালেবান কর্তৃপক্ষ আটক করেছে। আরএসএফের একটি তথ্য বলছে, বর্তমানে দুই সাংবাদিককে আফগানিস্তানে আটকে রাখা হয়েছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন