জার্মানিতে ২০২৪ সালের বাজেট নিয়ে ক্ষমতাসীন তিন শরিক দলের মতৈক্য হলো। ফলে বাজেটকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংশয় দূর হলো। জার্মানির সাংবিধানিক আদালতের একটি রায়ের পর এই সংশয় তৈরি হয়েছিল। আদালত জানিয়েছিলেন, কভিড-১৯-এর সময়ের ছয় হাজার কোটি ডলারের অব্যবহৃত ঋণ পরিবেশসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
করলে সেটা অসাংবিধানিক হবে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকার অসুবিধার মুখে পড়ে ও শরিকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। প্রধান অসুবিধা হলো, এবার বাড়তি অর্থ কোথা থেকে পাওয়া যাবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারকে অতিরিক্ত এক হাজার ৭০০ কোটি ইউরো জোগাড় করতে হতো।
ক্ষমতাসীন জোটের অবস্থা
জার্মানির ক্ষমতাসীন জোটে তিন শরিক আছে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি), গ্রিন পার্টি এবং ফ্রি ডেমোক্র্যাট (এফপিডি)। এই তিন দলের অগ্রাধিকারের তালিকা আলাদা। তারা বাজেট সংকট থেকে বের হতে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
এসপিডি ও গ্রিনরা কর বাড়ানোর পক্ষে ছিল। কিন্তু এফপিডি জানিয়ে দেয়, কর বাড়ানো যাবে না। তার থেকে কল্যাণমূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে খরচ কমানো হোক। কিন্তু এই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এসপিডি ও গ্রিনদের তীব্র আপত্তি ছিল। তারা চাইছিল, সরকারের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিধি-নিষেধ আছে, তা শিথিল করা হোক।
যে সিদ্ধান্ত হলো
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ, জাতীয় অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হাবেক এবং অর্থমন্ত্রী লিন্ডনার বুধবার জোটের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। শোলজ বলেছেন, সরকার ২০২৪ সালের জন্য ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ মেনে চলবে। সরকার খরচ ছাঁটাই করবে। অর্থ বাঁচাবে। কারণ সাংবিধানিক আদালতের রুলিংয়ের পর সরকারের হাতে এবার অর্থের পরিমাণ কম থাকবে।
শোলজ জানিয়েছেন, ‘সরকার পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা নিতে দায়বদ্ধ। কিন্তু ২০২৪ সালে পরিবেশ তহবিলে এক হাজার ২০০ কোটি ইউরো কম দেওয়া হবে। আমরা সামাজিক সুরক্ষায় হাত দেব না। কিন্তু আমরা খরচ নিয়ে একটা অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করব। অর্থ মন্ত্রণালয় দ্রুত বাজেট তৈরি করে ফেলবে।’
জার্মান চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, ‘শরিকদের মধ্যে আলোচনা কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা একটা ভালো ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমঝোতায় আসতে পেরেছি।’
এ ছাড়া হাবেক জানিয়েছেন, ‘ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যে ছাড় সরকার দিচ্ছে, তা ঘোষিত সময়ের আগেই বন্ধ করে দেওয়া হবে। সৌর প্যানেল ব্যবস্থা সম্প্রসারণের খরচও ছাঁটাই করা হবে। দেশের রেল ব্যবস্থায় অর্থ দেওয়ার বিষয়টিরও সংস্কার হবে।’
পাশাপাশি লিন্ডনার জানিয়েছেন, ‘জার্মানির সরকারি রেল অপারেটরের হাতে থাকা একটি সহযোগী সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া হবে। তা ছাড়া পরিবেশ নষ্ট না করার জন্য যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেটাও ৩০০ কোটি ইউরো কম করা হবে।’
ইউক্রেনকে সাহায্য
তিন শরিক দলই ইউক্রেনকে সাহায্য করে যাওয়া নিয়ে একমত হয়েছে। লিন্ডনার জানিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য ৮০০ কোটি ইউরোর দ্বিপক্ষীয় সাহায্য করা হবে। যদি ইউক্রেনের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়, তাহলে তখন তারা উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
তবে এ বছরের শেষে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা সম্ভব হবে, নাকি একটা অন্তর্বর্তী বাজেট পাস করাতে হবে তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন