মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চায় ইহুদিবাদী ইসরায়েল। তবে এক্ষেত্রে সবসময় বাঁধা দিয়ে আসছিল ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে থাকা ফিলিস্তিন। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল-সৌদির এক হওয়ার বিষয়ে নমনীয় হতে পারে ফিলিস্তিন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ বিষয়ে আলোচনা করতে গতকাল বুধবার সৌদির উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল ফিলিস্তিনের শাসক দল প্যালিস্টিনিয়ান অথরিটির (পিএ) প্রতিনিধি দল। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠকে বসবে।
তবে সৌদির সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে ফিলিস্তিন। তারা বলেছে, তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ দিতে হবে।
সৌদি-ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবেই এ ব্যাপারে আলোচনায় বসেছে প্যালিস্টিনিয়ান অথরিটি।
ইসরায়েল-সৌদির সম্পর্কের বিষয়টি পুরোটি দেখভাল করবে যুক্তরাষ্ট্র। তারাই সবকিছু করবে। এর বদলে মার্কিনিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক চুক্তি করতে পারবে সেদি। তবে এটি যে এখনই হয়ে যাবে— এমন সম্ভাবনা কম। তাছাড়া বিষয়টি বাস্তবে রূপ নিতেও অনেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জ্যাক সুলিভানও বলেছেন, ‘আমরা এখনই কোনো ধরনের ঘোষণা অথবা ব্রেকথ্রু দেখতে পাব না।’
তবে সৌদি আরব-ইসরায়েলের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি হয় তাহলে এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য— আগামী নির্বাচনে আগে একটি বড় বিজয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের জন্ম হয়। তবে আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে বিবেচিত সৌদি আরব কখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে এখন যদি ইসরায়েলের সঙ্গে রিয়াদ এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে এটি ‘বিতর্কিত’ একটি বিষয় হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সব সর্বাধুনিক অস্ত্র, একটি বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি এবং অভ্যন্তরীণভাবে ইউরেনিয়াম মজুদের দাবি করেছে সৌদি।
অপরদিকে ইসরায়েলের জন্য এটি হবে সবচেয়ে লাভজনক। আরব বিশ্বের কাছ থেকে যে স্বীকৃতি তারা দীর্ঘদিন যাবত চাইছে সেটি পেয়ে যাবে।
২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে চারটি মুসলিম দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ইসরায়েল। এরপর আরও মুসলিম দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে তৎপরতা চালাচ্ছে তারা।
তবে সৌদির সঙ্গে চুক্তি করতে হলে ফিলিস্তিনিদের অনেক ছাড় দিতে হবে ইসরায়েলকে।
এছাড়া এ চুক্তির ক্ষেত্রে বাঁধা হতে পারেন সৌদির সাধারণ মানুষই। কারণ ঐতিহাসিকভাবে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংবেদনশীল। ফলে সৌদির ক্রাউন্স প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিজ দেশের মানুষকে আগে আশ্বস্ত করতে হবে।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও এ ব্যাপারে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের যেসব আইনপ্রণেতা ও রাজনীতিবিদ আছেন তারা চান না— সৌদিকে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সহায়তা দিক। কারণ সৌদি তাদের প্রতিবেশি দেশ ইয়েমেনে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া ইসরায়েলে বর্তমানে যে সরকার আছে, সেই সরকার নিয়েও মার্কিন আইনপ্রণেতাদের আপত্তি আছে। কারণ ইসরায়েলের বর্তমান সরকার অনেক বেশি উগ্র। তারা চান না এমন একটি উগ্র সরকারের অধীনে এ ধরনের চুক্তি হোক। যা তাদের জন্য বড় একটি বিজয় হবে।
এদিকে ফিলিস্তিন যেসব শর্ত দিয়েছে সেসব শর্ত বিষয়ে বিবিসিকে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, তারা শর্ত দিয়ে বলেছেন—
১। পশ্চিমতীরের যেসব অংশ ইসরায়েল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনের হাতে তুলে দিতে হবে
২। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ক্রমবর্ধমান বসতি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
৩। জেরুজালেমে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট খুলতে হবে— যেটি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
৪। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যকার আলোচনা আবারও শুরু করতে হবে— যেটি ২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আলোচনা সেখান থেকেই শুরু করতে হবে যেখানে এটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
জিবিডেস্ক //
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন