কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করলো ইরাক

কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বাগদাদে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে ইরাক। একই সঙ্গে স্টকহোমে নিযুক্ত ইরাকের রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাগদাদ। স্টকহোমে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘিরে ইরাক-সুইডেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চরম অবনতির মাঝে বৃহস্পতিবার ইরাকের সরকারের একজন মুখপাত্র এই তথ্য জানিয়েছেন।

গত মাসে সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর জেরে বৃহস্পতিবার বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে শত শত ইরাকির হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ ইরাকিদের আশ্বস্ত করে ইরাকের সরকার আবারও কোরআন পোড়ানো হলে সুইডেনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দেয় ইরাক।

এর কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই সুইডেন থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার ও বাগদাদে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে ইরাক।

ইরাকের সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাগদাদ সুইডেনে নিযুক্ত চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ইরাকের মাটিতে সুইডিশ কোম্পানি এরিকসনের কাজের অনুমতি স্থগিত করেছে।

সুইডেনে পাড়ি জমানো ইরাকি এক অভিবাসী গত জুন মাসে স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে কোরআনে অগ্নিসংযোগ করেন। এছাড়া ইসলামবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতিবার সুইডেনে নিযুক্ত ইরাকি দূতাবাসের বাইরে আবারও কোরআন পোড়ানোর অনুমতি পেয়েছে।

দেশটিতে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ইরাক, ইরান ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এ নিয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে সুইডেনের সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। 

কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বাগদাদে সুইডেনের দূতাবাসে শত শত মানুষ হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। এই হামলার নিন্দা জানিয়ে সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রোম বলেছেন, দূতাবাসের কর্মীরা নিরাপদে আছেন। তবে ইরাকি কর্তৃপক্ষ ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী দূতাবাস রক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। 

ইরাকের প্রভাবশালী ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সদর-পন্থী গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশটির জনপ্রিয় টেলিগ্রাম চ্যানেলের পোস্টে বলা হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুইডেনে দ্বিতীয়বারের মতো কোরআন পোড়ানোর পরিকল্পনার প্রতিবাদে শিয়া ধর্মগুরু মুকতাদা আল-সদরের সমর্থকরা বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের ডাক দেন।

দেশটির অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্মীয় ওই নেতার ডাকে তার কয়েক হাজার সমর্থক বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন। এই বিক্ষোভ থেকে বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। দেশটিতে প্রায়ই নানা ধরনের অসঙ্গতি আর অনিয়মের প্রতিবাদে মুকতাদা আল-সদরের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেন। গত গ্রীষ্মেও বাগদাদের ব্যাপক সুরক্ষিত গ্রিন জোন দখল এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন সদরের সমর্থকরা।

এক টুইট বার্তায় সদর বলেছেন, ‘ইরাকি সরকারকে কেবল নিন্দা জানানোই নয়, বরং ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করবো।’

এই বছরের শুরুর দিকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় কোরআন পোড়ানোর জন্য অনুমতি চেয়ে করা কয়েকটি আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সুইডিশ পুলিশ। কিন্তু দেশটির আদালত পুলিশের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে জানায়, জনসাধারণের এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের সুদূরপ্রসারী বাকস্বাধীনতা আইনে সুরক্ষিত। পরে আবেদনকারী ব্যক্তিকে জনসমক্ষে কোরআন পোড়ানোর অনুমতি দেয় দেশটির আদালত।

চলতি মাসে সুইডেনের সরকার দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ায় জনসমক্ষে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা বন্ধে আইনে পরিবর্তন আনার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানায়।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন