গণভবনে একজন সোহেল তাজ ও ইতিহাসের আত্মদর্শন

gbn

বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসে জাতীয় চার নেতার জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে  অন্তর্ভুক্ত করা সহ তিন দাবিতে সংসদ ভবন এলাকা থেকে পদযাত্রা করে গণভবনে যান আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। সেখানে তিনি তার দিন দফা দাবিতে একটি স্মারকলিপি  দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার প্রতিনিধিরা এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন বলে গণভবন থেকে বের হয়ে জানান সোহেল তাজ,  তাজউদ্দীন  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী ও প্রথম প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নেতার অন্যতম একজন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে সাত কোটি মানুষের প্রাণের দাবি ও লড়াই এর একজন প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে এই চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামানের পৃথক এবং বিস্তারিত জীবনী ও অবদান তুলে ধরার বিলম্বিত এ দাবির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় বঙ্গবন্ধু এবং এ জাতির আস্থার চারটি স্তম্ভকেই  কিভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে হত্যা, ষড়যন্ত্র ও অকৃতজ্ঞতার পঙ্কিল ইতিহাস। ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সাথে পালনের লক্ষ্যে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা এবং এ দিনের তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বকে অবহেলা  জনস্বার্থ ও সংবিধানের পরিপন্থী।

জনস্বার্থ মোকদ্দমা হল আইনের ব্যবহার মানবাধিকার ও সমতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বা জনসাধারণের ব্যাপক উদ্বেগের কোন বিষয়কে  উত্থাপন করা। এটি একটি সংখ্যালঘু বা সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী বা ব্যক্তিদের কারণকে এগিয়ে নিতে ও সহায়তা করে। কোনো জনস্বার্থ মামলা সরকারী এবং বেসরকারী উভয় আইন বিষয় থেকে উদ্ভূত হতে পারে. এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের অনেক আইনজীবী রয়েছেন বাংলাদেশের উচ্চ-আদালতে। সম্প্রতি ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। ডেইলি ষ্টার জানিয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও রাষ্ট্রীয় সব কর্মসূচির শেষে "জয় বাংলা" স্লোগান ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডক্টর বশির আহমেদের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আবেদনে আইনজীবী উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা এবং সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম বলেছেন, নতুন কোনো জাতি সৃষ্টি হলে তার দলিল থাকে। বাংলাদেশের যে জন্ম, উৎপত্তি, তার মৌলিক দলিল হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। পৃথিবীতে খুব বেশি এ রকম দলিল নেই। এটা বাংলাদেশের জন্মসনদ।

গত ১০ এপ্রিল রোববার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের গণপরিষদের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন এবং ‘বাংলাদেশের গণপরিষদের কার্যবিবরণী ও প্রাসঙ্গিক তথ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানে আমীর-উল ইসলাম এসব কথা বলেন। র‌্যামন পাবলিশার্স আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এই প্রখ্যাত আইনজীবীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।---স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিয়ে তেমন কোনো কাজ না হওয়ায় আফসোস প্রকাশ করেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতি অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ইতিহাসের জায়গাকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। শুধু অর্থসম্পদই যথেষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় সম্পদ শিক্ষা। শিশু-কিশোরদের জন্য আমরা পাঠ্যপুস্তকে কী সম্ভার তৈরি করছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি। এটি সব স্কুল-কলেজে কার্যকর করতে হবে।’---অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান নিয়ে গবেষণা করবেন, তাঁদের জন্য বইটি খুব প্রয়োজনীয় হবে। বইটিতে সে সময়কার বিভিন্ন ঘটনা উঠে এসেছে।---মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও ইতিহাসকে নিয়ে যেমন মিথ্যাচার হয়েছে, তেমনি সংবিধান প্রণয়ন নিয়েও প্রচুর মিথ্যাচার হয়েছে। এই বইয়ের কার্যবিবরণী পড়লে সেই মিথ্যাচারের ধোঁয়াশা কেটে যায়।(সূত্র:প্রথম আলো)

১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার;  ২৬ মার্চ ১৯৭১ স্বাধীনতা ঘোষণার ধারাবাহিকতায়  এ সরকার গঠিত হয় যা বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয় প্রবাসী মুজিবনগর সরকার হিসেবে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে এ মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে. আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তথা প্রধান নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গঠিত হয় সে  সরকার। "বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে সেই ক্ষণজন্মা অগ্নিপুরষদের পর্বতপ্রমাণ ত্যাগ ও অবদানের কথা গণমাধ্যমের সুবাদে ৭৫ এর পর  আলোচনায় ছিল বা এখনো আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম    উপরাষ্ট্রপতি (রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকার কারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত), তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম মনসুর আলী, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এস.এ সামাদ প্রতিরক্ষা সচিব।সূত্র:আমার সংবাদ, কর্নেল (অব:) কাজী শরীফ উদ্দিন, ১০ এপ্রিল ইতিহাসের মহেন্দ্রক্ষণ)

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে সবিনয়ে অনুরোধ করবো কাল বিলম্ব না করে সোহেল তাজের দাবিগুলোকে বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ নিন. বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার ঘোষণা ও সংবিধান প্রণয়ন সহ মুক্তিযুদ্ধ এর মৌলিক বিষয়গুলোকে নিয়ে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সিদ্বান্ত নিতে বিলম্ব যেন আর বিলম্বিত না হয়।  মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের আইনজীবীদের এ বিষয়ে হাইকোর্টের স্মরণাপন্ন হতে ও অনুরোধ করবো। নিশ্চয়ই উনারা বিষয়টি শুনবেন এবং তাদের বিজ্ঞ মতামত দিবেন যা জনস্বার্থ  ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে সমুন্নত করবে।

লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, জন হাওয়ার্ড সোসাইটি অফ ম্যানিটোবা, সাবেক বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন