ইয়ানূর রহমান : বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃক দুইটি সিএন্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্স বাতিল ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরদের নামে মামলা দেওয়ায় প্রত্যাহারের দাবিতে এপথে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যসহ কাস্টমস ও বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারি বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
শনিবার সকাল থেকে ২য় দিনের মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে কোন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়নি। বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমসের সকল ধরণের কার্যক্রম ছিলো বন্ধ। বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারি ৮টি সংগঠনের ডাকা অনির্দিষ্ঠকালের এ বন্ধ’র কারণে দু‘দেশের বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় পচনশীল পণ্যসহ শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে আছে। যা নিয়ে মারাত্বক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কাঁচাপণ্য আমদানি-রপ্তানি কারকরা।
এ বন্দর ব্যবহারকারি ব্যবসায়ী ও কর্মচারিদের সাথে কাস্টম কর্মকর্তাদের বৈরি আচরন ও অবিলম্বে সিএন্ডএফের বাতিলকৃত লাইসেন্স পূণবহালসহ কর্মচারিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রবিবার বেলা ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বেনাপোল কাস্টম হাউসের সামনে বিক্ষোভ সভা ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠনের মালিক ও কর্মচারিরা।
বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারি বিভিন্ন সংগঠনের মালিক ও কর্মচারিদের সাথে কথা বলে জানাযায়, গত ২ মার্চ ভারত থেকে বন্ড লাইসেন্স(শুল্ক মুক্ত)’র মাধ্যমে আমদানিকৃত ডেনিম ফেব্রিক্সের ট্রাকে বিশেষভাবে লুকিয়ে আনা প্রায় অর্ধকোটি টাকার অবৈধ পণ্য শাড়ি, থ্রিপিছ, মদ, ফেনসিডিল, বিদেশি সিগারেট, ঔষধ, কারেন্ট জালসহ বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য আটক করে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় চালকের সরাসরি সহযোগিতা থাকলেও ট্রাকসহ চালককে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিপরীতে বুধবার বেনাপোলের শিমুল ট্রেডিং এজেন্সি ও আইডিএস গ্রুপ নামে দুইটি সিএন্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও সিএন্ডএফের কর্মচারীদের নামে মিথ্যা মামলা করে বেনাপোল পোর্ট থানায়।
ডেনিম ফেব্রিক্সের আমদানিকারক ছিলো ঢাকাস্থ্য অনন্ত ডেনিম টেকনোলজি লিমিটেড ও ফ্যাশান ফোরাম লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
এ ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের আটক না করে সিএন্ডএফ’র লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও কর্মচারীদের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার(৩ মার্চ) সকালে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন, সিএন্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশন, ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন এক যৌথ সভায় আমদানি-রপ্তানিসহ কাস্টমস ও বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। লাইন্সেস পূনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।
বেনাপোল সিএন্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত না করে সিএন্ডএফ স্টাফ সদস্যের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করেছে কাস্টমস। মামলা প্রত্যাহার করা না হলে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখায় পণ্য চালান গ্রহণের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, ভারতীয় এক শ্রেণীর ট্রাক চালকরা অর্থের প্রলোভনে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে বৈধ আমদানি পণ্যের সঙ্গে চোরাচালানী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ পণ্য পাচার করে আসছে। এর আগে অসংখ্য ট্রাক অবৈধ মালামালসহ বিজিবির হাতে ধরাও পড়েছে। অপরদিকে পেট্রাপোল বিএসএফ ও পুলিশ ভারতীয় ট্রাকের মধ্য থেকে স্বর্ণ, ডলার, পাসপোর্ট, মোবাইল, রুপার গহনাসহ ট্রাকচালককে আটক করেছে।
তিনি আরো বলেন, ভারতে এদেশের ট্রাকচালক আটক হলেও বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভারতীয় কোনো ট্রাক চালককে আটক না করে ছেড়ে দেয়। এখানে আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ঠ সিএন্ডএফকে দায়ী করা হয়। অথচ তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। এ রকম ঘটনায় ইতোমধ্যে ১০টি সিএন্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব ঘটনায় বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আলোচনা করে ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখাসহ কাস্টমস ও বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশীদ মিয়া জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা ঘোষণায় বৈধ পণ্য চালানের আড়ালে ভারতীয় ফেনসিডিল, সিগারেট, মদসহ বিভিন্ন চোরাচালানী পণ্য আটক করা হয়। এ অভিযোগে দুটি সিএন্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করে তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে। অবৈধ পণ্য আমদানির অভিযোগে জড়িত সিএন্ডএফ কর্মচারিদের নামে থানায় মামলা করা হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যসহ সকল কার্যক্রম সচল রাখতে সংশ্লিষ্ঠ বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন