শ্যালিকাকে নিয়ে পালালেন স্বামী, স্ত্রীর গলায় ফাঁস

জিবিনিউজ ডেস্ক //
ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো শান্তনা আক্তারের নিথর দেহ ঝুলছিল। একই আড়ায় আরেক ওড়নায় ঝুলছিল শিশু মাহফুজার দেহও।
মঙ্গলবার সকালে দরজার ফাঁক দিয়ে এমন দৃশ্য দেখার পর চিৎকার দিয়ে ওঠেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে রাজধানীর সবুজবাগের আহম্মদবাগ স্কুলের পেছনের ওই বাসা থেকে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, প্রথমে দেড় বছরের মাহফুজাকে তার মা ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেন। এরপর ২৫ বছর বয়সী মাহফুজা নিজে আত্মহত্যা করেন। ঘরের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় বাইরের কেউ তাদের হত্যা করেনি বলে ধারণা করছে পুলিশ।
সবুজবাগ থানা পুলিশ পারিবারিক কলহে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে জানালেও প্রতিবেশীরা ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। আকলিমা বেগম নামে একজন জানান, দুই দিন আগে শান্তনার স্বামী মামুন মিয়া কিশোরী শ্যালিকাকে নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে শান্তনা রান্নাবান্না করেননি। ছোট্ট মাহফুজাকে প্রতিবেশীরা খাবার দিলে সেও খায়নি। বোনকে নিয়ে পালানোর জেদ আর অভিমানে হয়তো মেয়েকে নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন শান্তনা।
আরেক প্রতিবেশী জানান, পাঁচ বছর আগে ইলেকট্রিশিয়ান মামুনকে প্রেম করে বিয়ের আগে আরও একটি বিয়ে হয় শান্তনার। ওই ঘরে তার একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু মামুন তাকে ফেলে বোনকে নিয়ে পালিয়ে গেলেন। মাঝে প্রাণ গেল মা-মেয়ের।
বাবা-মায়ের কলহ, অনৈতিক সম্পর্কসহ নানা কারণে প্রায়ই বলি হচ্ছে শিশুরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার সবুজবাগে ঘটল এমন ঘটনা।
দুপুরে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় মানুষের জটলা। আহম্মদবাগের টিনশেড বাড়ির একটি কক্ষে ২৮০০ টাকায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন মামুন। রোববার শ্যালিকাকে নিয়ে পালানোর পর স্ত্রী ও সন্তান বাসাতেই ছিলেন।
মামুন ইলেকট্রিশিয়ানের পাশাপাশি স্থানীয় একটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের লাইনম্যান হিসেবেও চাকরি করতেন।
মামুনের এক স্বজন জানান, মামুন ও তার স্ত্রী শান্তনার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুরে। ৬ মাস আগে শান্তনার ১৬ বছর বয়সী ছোট বোন আহম্মদবাগের ওই বাসায় যায়। এরপর সে একটি গার্মেন্টে কাজ নেয়। দুই মাস আগে চাকরি ছেড়ে সে বাসাতেই ছিল। এরই মধ্যে দুলাভাই মামুনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির জানান, ঘরের দরজা ভেঙে মা ও মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। দু’জনের গলাতেই ফাঁস লাগানোর চিহ্ন ছাড়া অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে সোমবার রাতে মা তার সন্তানকে ফাঁস লাগিয়ে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেন। দু’জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা মনে করছেন, মামুন তার স্ত্রী ও সন্তানের নির্মম পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পলাতক মামুনকে আটকেরও চেষ্টা চলছে। তাকে পাওয়া গেলে পুরো ঘটনা সম্পর্কে জানা যাবে।