জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ মাহফুজুর রহমান এক কিশোরের স্বপ্নভঙ্গ, এক পরিবারের আজীবন বেদনা,পরিবারের শেষ না হওয়া কান্না

gbn

এস.এম.  সাইফুল ইসলাম কবির,  বাগেরহাট :
 আমার মাহফুজ ক্রেকেট খেলতে ভালবাসতো, ওর স্বপ্ন ছিলো সেনাবাহিনীতে চাকুরি করে একজন অফিসার হবে। ঢাকায় ফ্লাটবাসা করে দিবে বাবা মা তোমাদের আর কষ্ট থাকবে না।  ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার সদ্য রেজাল্ট দিয়েছে। ও বেঁচে থাকলে তারও আজকে রেজল্ট হতো। টেষ্ট পরীক্ষা দিয়ে এসে গায়ের শাট খুলে রেখেছে। সে শাটের গায়ের গন্ধ আজও নিচ্ছি। ওর এরকম অনেক কথা ও স্মৃতি আমাদের আজও কাঁদিয়ে বেড়ায়। কথাগুলো বলতে গিয়ে অঝোরে কেঁদে উঠেন ছেলে হারা শহীদ মাহফুজের বৃদ্ধ পিতা আব্দুল মান্নান ও মা বেগম।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ঢাকার মিরপুর-১০ গোলচত্ত¡রে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন মিরপুর আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ছাত্র বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের হরতকিতলা গ্রামের শহীদ মাহফুজুর রহমান।   
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোষরদের অত্যাচারে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের রোষানলে পড়ে ২০০৮ সালে পৈত্রিক ভিটেমাটি ফেলে রেখে আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী বেগম ৩ মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় মিরপুর এলাকায় গিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ২০১০ সালে মাহফুজুর রহমান জন্মগ্রহন করেন। বাবা মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে মাহফুজ সকলের ছোট। মাহফুজুর রহমান ঢাকার মিরপুর আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের ১০ম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন জোরালোভাবে। তখন মাহফুজও ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে যেতো। তবে, বাসায় আমরা বুঝতাম না। একদিন দেরি করে বাসায় আশায় পিতা আব্দুল মান্নান জিজ্ঞেস করলেন? মাহফুজ তুমি সারাদিন কোথায় ছিলে উত্তরে মাহফুজ বল্লো বাবা রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। আপনিতো বলেছিলেন অন্যায়ে প্রতিবাদ করতে হয়। আমি এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তুমি কিসের আন্দোলন করছো তোমারতো আন্দোলন করার বয়স হয়নি বাবা।  
    শহীদ মাহফুজুর রহমানের পিতা-আব্দুল মান্নান বলেন,-দিনটি ছিলো ১৯ জুলাই শুক্রবার। জুমার নামাজের এক ঘন্টা পূর্বে বাসা থেকে গোসল করে নতুন পাঞ্জাবি পড়ে গায়ে আতর মেখে মাকে বলে গেলেন আমি নামাজ পড়তে যাচ্ছি আমার আসতে দেরি হবে বলে লিফটে উঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে চলে গেলেন মাহফুজ। দীর্ঘক্ষন সময় পার হয়ে গেলেও মাহফুজ আর বাসায় ফেরেনি। ওর মা দুপুরের খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন। নিকটতম এক আত্মীয় সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোবাইল ফোনে সংবাদ দিলো গোলচত্বরে ছাত্রদের ওপর পুলিশের গোলাগুলি হয়েছে। অনেক ছাত্র গুলিবৃদ্ধ হয়েছে মাহফুজ কি বাসায় ফিরেছে? আপনার হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নেন। ছেলেকে নিকটতম অনেক হাসপাতালে গিয়ে খোঁজা খুজি করি। এক পর্যায়ে ঢাকা সোহরার্দী হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি কয়েকজন ছাত্রের লাশ হাসপাতালের ফ্রিজে রয়েছে। তার মধ্যে আমার ছেলে মাহফুজকে সনাক্ত করতে পেরেছি। পরের দিন ২০ জুলাই এ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ১১টার দিকে ছেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি মোরেলগঞ্জের হরতকিতলা আসি ওই রাতে নিজ বাড়িতে ছেলের লাশ দাফন করতে পুলিশী ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের হয়রানির স্বিকার হয়েছি। গোপনে দাফন শেষ করে ভোর রাতে বাড়ি থেকে এক পর্যায়ে পালিয়ে গিয়ে পটুয়াখালীতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখনও নিরাপত্তহীনতায়। রাতে বাড়িতে যেতে হলে সাথে মানুষ নিয়ে আসতে হয়। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা থাকলেও আমারদের খোঁজ খবর রাখাসহ শহীদ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। থানা পুলিশের নিকট থেকে তেমন সাড়া মিলছে না। ছেলেকে হারিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনই পাগল প্রায়। কোন কিছুই মনে রাখতে পারছি না।  

মাহফুজুরের মা বেগম বলেন, মাহফুজুরের গায়ের পরিহিত শাট থেকে আমি এখনও গন্ধ পাচ্ছি। আমার ছেলেকে কেনো মারা হলো। প্রধানমন্ত্রী কেনো গুলির নির্দেশ দিলো। ওরা তো শুধু কোটা বিরোধী বৈষম্য আন্দোলন করেছিলো। যদি জেল হাজতেও আটকিয়ে রাখা হতো। তা হলেও তো ছেলের মুখটা দেখতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রীসহ যারা গুলির নির্দেশ দিয়েছে তাদের কঠিন বিচার চাই, ফাঁসি চাই।           
সরকারিভাবে এ শহীদ পরিবারটি জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এককালিন ৫ লাখ টাকা অনুদান, জেলা পরিষদ থেকে ২ লাখ টাকা, সর্বশেষ ১০ লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র হাতে পেয়েছেন।

 শহীদ মাহফুজুর রহমানের পিতা আব্দুল মান্নান ও মা বেগমের দাবি বাধ্যক্য বয়সে মানুষের মাঝে সার্বক্ষনিক থাকার জন্য স্থানীয় গুলিশাখালী বাজারে সরকারিভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মোরেলগঞ্জ শহরে একটু জমি হলে কোনমতে চলতে পারব। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) দপ্তরে একটি আবেদন করেছেন। এক বছর হলেও কোন সুরহা হয়নি।

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল্লাহ বলেন, জুলাই ২৪’এ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারিভাবে গেজেটভুক্ত তালিকায় এ উপজেলায় শহীদ মাহফুজুর রহমান, শহীদ আলভি ও শহীদ নূরু মিয়ার নাম শহীদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসরে মাধ্যমে সরকারিভাবে এদেরকে বিভিন্ন অনুদান প্রদান করা হয়েছে। তবে, খাস জমি সহকারী কমিশার (ভূমি) কর্মকর্তা দিতে পারে না। নীতিমাল অনুযায়ী এর প্রাপ্ত সুবিধার আওতায় আসতে হবে।#
 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন