বিগত সরকারের আমলে আমার নামে দশটা মামলা হয়েছে

gbn

রাজনৈতিক অঙ্গনেও সক্রিয় সংগীতশিল্পী মনির খান। গত বছরের জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন তিনি। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দেশ, নির্বাচন, রাজনীতি ও সংগীত ক্যারিয়ার নিয়ে সঙ্গে কথা বললেন এই শিল্পী।

ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া অনেক পরের কথা। দেশের মানুষ ও দেশটাকে ভালো রাখার প্রত্যাশাই সবার আগে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দেশের জন্য বিশাল একটি অর্জন। ছাত্রদের সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষ মিলে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে। এ অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলো, কিন্তু যে আশা নিয়ে, যে উদ্দীপনা নিয়ে স্বৈরশাসককে বিদায় করলাম, এতদিনেও সে আশা পূরণ হয়নি, একটা নির্বাচন হওয়া খুব জরুরি ছিল।

 

বিগত সরকারের আমলে আমার নামে দশটা মামলা হয়েছে

কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে দেশটা নেই বিধায় দেশের ভেতরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। টেলিভিশন, সংবাদপত্র খুললেই দেখা যায় মানুষ হত্যা, ছিনতাই, ধর্ষণ, মারামারির খবর। এগুলো দেখে আমাদের সাধারণ মানুষের মনের ভেতর প্রতিদিনই রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিকেববান মানুষ এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারছেন না। আমরা যারা সুস্থ চিন্তার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, বিবেক বিবর্জিত কিছু কর্মকাণ্ড দেখে তাদের অন্তরে ভীষণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা এটা আশা করিনি। আমরা চাই অচিরেই একটা নির্বাচনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা অর্পণ করা হোক। সাধারণ জনগণ যাকে চায়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটা সরকার রাজতৈকিভাবে গঠিত হোক। দেশের আইন শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। মোট কথা, আমরা শান্তি চাই।

তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনটা দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দিলে সবকিছু জবাবদিহিতার মধ্যে আসতো। এখন কোনো কিছুর জন্য কারো কোনো জবাবদিহিতা নেই বলে মনে হচ্ছে। আমার কথা হলো, এখন একটাই পথ, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনার একটা নীতিমালা তৈরি করা। এ ছাড়া এই অরাজকতা বন্ধ করা খুব মুশকিল।

বিগত সরকারের আমলে আমার নামে দশটা মামলা হয়েছে

শুরুতেই ছাত্রদের ধন্যবাদ জানাই। তারা এগিয়ে না এলে বিগত সরকারের পতন এত দ্রুত হতো না। স্বৈরাচার সরকারকে আমরা সরাতে পারতাম না। ছাত্রদের সঙ্গে সারা দেশের মানুষ যখন এক হলো, তখন পরিবর্তনের আবহাওয়া তৈরি হলো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সংগঠিত অভ্যুত্থানের পর তৎকালীন সরকারের বিদায়ে মানুষের মাঝে নতুন স্বপ্ন তৈরি হলো। এরপর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলো। এটিই একটি বড় ইতিবাচক দিক। সেই সময়ে যদি ইউনূস সাহেবের মতো একজন ব্যক্তির হাতে দেশটা না থাকতো, তাহলে বড় একটা বিপর্যয় হতে পারতো। তিনি বিশ্বের কাছে একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ। তিনি বাংলাদেশের অহংকার। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান অর্জন করেছেন, নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ নন, অর্থনীতিবিদ। এ কারণে তিনি বিভিন্নভাবে মিসগাইডেড হয়েছেন হয়তো। তারপরও তাকে স্যালুট জানাই। তার মতো মানুষ দেশের হাল ধরেছেন বলেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকে আছে। তিনি সরকার পরিচলানার দায়িত্ব পেয়েই যদি দ্রুত একটি নির্বাচন দিয়ে দিতেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো। তাহলে তিনি দেশটাকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারতেন। যদি সত্যিকারার্থে আগামী ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনটা হয়, তাহলে দেশে যে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা চলছে, তা থেকে আমরা দ্রুত মুক্তি পাব।

 

আমি পদ-পদবী থেকে দূরে ছিলাম, দল থেকে নয়। অনেকেই জানতে চান আমি নির্বাচনে অংশ নেব কি না। এটা আমার দলের সিদ্ধান্ত। সন্তানের সঙ্গে বাবার অভিমান থাকতে পারে। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর অভিমান হয়। বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর অভিমান হয়। যেখানে আন্তরিকতা গভীর থাকে, সেখানে অভিমানের ব্যাপার থাকে। আমি দলের বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি। দলের প্রতি অভিমান তৈরি হয়েছিল বলে, কিছুদিন দূরে ছিলাম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমি কখনো কোথাও নিজের লাভের জন্য, নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যাইনি। কারণ আমি একটা দলের নীতি নিয়ে চলি, একটা দলের আদর্শে বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে, তার নীতির ওপর আস্থা রেখে আমি তার দলে যুক্ত হয়েছিলাম। যেখানে বিশ্বাস, যেখানে আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে, সেখানে অন্য কোনো চিন্তা করার প্রশ্নই আসে না। এখন দল সিদ্ধান্ত নেবে যে, আমাকে কোনো কাজে লাগালে আমি দলের উপকারে আসবো কি না। বিগত সরকারের আমলে আমার নামে দশটা মামলা হয়েছে। তখন আমি জাসাসের সাধারণ সম্পাদক, সেই ২০০৮ সাল থেকে। আমার জার্নিটাও দীর্ঘ।

বিগত সরকারের আমলে আমার নামে দশটা মামলা হয়েছে

 আমি দীর্ঘ এগারো বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকা মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলা নিয়ে। এ জেলায় মোট চারটা আসন। আমার আসন ঝিনাইদহ-৩। মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর এলাকা নিয়ে সেই আসন। আমি একজন শিল্পী হিসেবে বা একজন সমাজসেবক হিসেবে তাদের কাছে বেশ পরিচিত। আমি তাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কাজ করেছি। সেখানে আমি আরও কাজ করতে চাই। এখনো সেখানকার মানুষের চাহিদা হচ্ছে, দীর্ঘ ১৬ বছরের দুঃশাসনে নিষ্পেষিত জীবন থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের একজন ভালো মানুষ। যে মানুষকে দিয়ে হয়রানি বা শোষণমূলক কাজ হবে না। অত্যাচারিত জীবন যেন কাটাতে না হয়, এজন্য ভালো মানুষ তারা বেছে নিতে চায়। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনগণ বেছে নেবে তাদের যাকে দরকার, এবং আমার দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও আমার নেতা জনাব তারেক রহমান, নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নেবেন যে, কাকে বেছে নিলে ভালো হবে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন