ভারতে ‘ভোট চুরি’র প্রশ্নে মুখোমুখি রাহুল গান্ধী ও নির্বাচন কমিশন

gbn

ভোটার তালিকায় কারচুপি করে ব্যাপকভাবে ‘ভোট চুরি’ হচ্ছে, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছেন।

রাহুল গান্ধীকে হয় হলফনামা পেশ করার অথবা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসি। অন্যদিকে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা বিহারের মাটিতে দাঁড়িয়ে রোববার (১৭ আগস্ট) আবারও কমিশনের বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তুলেছেন।

 

এদিন বিকেলে দিল্লিতে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে ভারতের তিনজন নির্বাচন কমিশনার একযোগে অভিযোগ জানান, রাহুল গান্ধী যা করেছেন, তা ‘সংবিধানের অবমাননা’ ছাড়া কিছুই নয়।

 

দুই কমিশনার ড. সুখবীর সিং সান্ধু ও ড. বিবেক জোশীকে পাশে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের ভোটারদের নিশানা করতে নির্বাচন কমিশনকে একটি লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

‘কমিশনের চোখে শাসক বা বিরোধী– সব রাজনৈতিক দলই সমান’ দাবি করে এবং রাহুল গান্ধীকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, যারা ‘ভোট জালিয়াতি’ বা ‘ভোট চুরি’র মতো শব্দ ব্যবহার করছেন, তারা আসলে দেশের সংবিধানেরই অমর্যাদা করছেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশন যখন রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এই আক্রমণ শানাচ্ছে, তার কিছুক্ষণ আগেই এই কংগ্রেস নেতা বিহারে ১৬ দিনব্যাপী ও ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র সূচনা করেন।

 

বিহারের সাসারামে সেই যাত্রার সূচনাতেও তিনি অভিযোগ তোলেন, সারা দেশেই বিধানসভার নির্বাচনগুলো এবং লোকসভার নির্বাচন লুট করা হচ্ছে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে।

রাহুল গান্ধী আরও বলেন, বিহারে ভোটার তালিকায় যে এসআইআর বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের (বিশেষ নিবিড় পর্যালোচনা) কাজ চলছে, তাতেও ভোটারদের নাম সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।

ভোটার তালিকায় এই গরমিলের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি গত বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তাল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়া, যাতে প্রাথমিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। দেশটির প্রায় সব বিরোধী দল এই এসআইআর-এর তীব্র বিরোধিতা করছে।

 

বলা যেতে পারে, রোববার থেকে ভারতের একটি অন্যতম প্রধান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান – জাতীয় নির্বাচন কমিশনও সেই বিতর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িয়ে পড়লো।

রাহুল গান্ধীর ‘অ্যাটম বোমা’

এই গোটা বিতর্কের সূচনা হয়েছিল গত ৭ অগাস্ট, যখন রাহুল গান্ধী দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে একটি ভিন্নধর্মী সংবাদ সম্মেলন করেন। তার কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, তিনি খুব শিগগির একটা ‘অ্যাটম বোম্ব’ ফাটাবেন!

সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচন কমিশনেরই দেওয়া ডেটা ও তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখান, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে শুধু ব্যাঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা আসনেই অন্তত এক লাখ ভোটারের হিসেবে কারচুপি করা হয়েছিল।

 

কীভাবে মাত্র ১০ বর্গফুটের একটি বাড়িতে ৮০ জন ভোটারকে নথিভুক্ত করা হয়েছিল এবং তালিকায় আরও হাজার হাজার ভুয়া এন্ট্রি করা হয়েছিল বা বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়েছিল – মহাদেবপুরা থেকে সেই উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি।

যদিও এই সব দাবির কোনো কোনোটি নিয়ে পরে পাল্টা প্রশ্নও উঠেছে।

ওই একটি কেন্দ্রের হিসেব এক্সট্রাপোলেট করে তিনি আরও দাবি করেন, সারা দেশে যদি ৩০টি আসনেও এই মাপের ভোটার তালিকায় গরমিল থেকে থাকে এবং তার সুবিধা নিয়ে সেগুলোতে ক্ষমতাসীন দল জিতে থাকে, তাহলে খাঁটি ভোটার তালিকায় ভোট হলে নরেন্দ্র মোদীর টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া হতো না।

 

ভোটার তালিকায় এভাবে কারসাজি করার বিষয়টিতে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশ ছিল বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

ভারতের কোনো শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ এভাবে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়ে এর আগে এরকম ‘ডেটা রিচ’ কোনো সংবাদ সম্মেলন কখনোই করেননি। তাই সে দিন রাহুল গান্ধীর বক্তব্য পেশকে সব দিক থেকেই ব্যতিক্রমী বলে বর্ণনা করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

তবে নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা দাবি করেছে, হয় তাকে নিজের অভিযোগের স্বপক্ষে শপথ নিয়ে কোনো হলফনামা পেশ করতে হবে অথবা মিথ্যা অভিযোগ তোলার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নেতৃত্বে তিনজন কমিশনারের যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও এদিন সেই বক্তব্যই তুলে ধরা হয়েছে।

জ্ঞানেশ কুমার বলেন, রাহুল গান্ধী যদি সব নিয়ম মেনে সাতদিনের মধ্যে কোনো হলফনামা জমা না দেন কিংবা জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমাও না চান, তাহলে কমিশন ধরে নেবে তার তোলা সব অভিযোগই ভিত্তিহীন।

রাহুল গান্ধী যেহেতু মহাদেবপুরা আসনের ভোটার নন, তাই ওই আসনের ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো অভিযোগ জানাতে হলে তার নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন আছে।

কমিশন আরও জানায়, এরকম ক্ষেত্রে হলফনামা জমা দেওয়ার নিয়ম হলো সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার কাছে শপথ নিয়ে একজন ‘সাক্ষী’ (উইটনেস) হিসেবে তাকে অভিযোগ নথিভুক্ত করতে হবে।

শুধু তাই নয়, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে শপথ নেওয়ার সময় তার সামনেই সেটা নিতে হবে।

রাহুল গান্ধী অবশ্য এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তিনি একজন এমপি হিসেবে দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতের সংবিধান ছুঁয়ে শপথ নিয়ে ফেলেছেন, ফলে নতুন করে আর কোনো শপথ নেবেন না।

তবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে হলফনামা না পেলে তারা অভিযোগগুলোর তদন্ত নিয়ে এক পা-ও এগোতে রাজি নয়!

বিহারে রাহুল গান্ধীর যাত্রা শুরু

দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কংগ্রেস নেতা ও মুখপাত্র পবন খেড়া বলেন, এ তো বোঝাই যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।

এদিকে, রোববার থেকেই নির্বাচনমুখী বিহারে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র সূচনা করেছেন রাহুল গান্ধী। পরবর্তী ১৬ দিন ধরে রাজ্যের ২০টি জেলার মধ্যে দিয়ে এই যাত্রা ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দেবে, যাতে নেতৃত্ব দেবেন রাহুল নিজে।

যাত্রার শুরুতে সাসারামে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, আমরা কিছুতেই বিহারে ওদের ভোট চুরি করতে দেবো না। বিহারের মানুষ কিছুতেই চাইবেন না তাদের ভোটের অধিকার কেউ চুরি করে নিক। গরিব মানুষের একটাই অধিকার আছে, সেটা ভোটের অধিকার। কোনো মূল্যেই আমরা সেটা চুরি হতে দেবো না।

 

 

 

বিহারে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা আগামী নভেম্বরে, অর্থাৎ আর মাস তিনেকের মধ্যেই। ভোটার তালিকা নিয়ে একদিকে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন, আর অন্যদিকে বিরোধীদের তীব্র সংঘাতের প্রথম ক্ষেত্রটি হতে যাচ্ছে এ রাজ্যেই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন