হাকিকুল ইসলাম খোকন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,সাহিত্যিক,গবেষক ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের জীবন সদস্য অধ্যাপক সিরাজুল হক (৭৯)বৃহস্পতিবার,২৬ জুন,২০২৫, নিউইয়র্ক সময় সকাল ১১ঃ১৫ মিনিটে কুইন্স হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন ।
উল্লেখ্য,গত ১০ এপ্রিল ২০২৫ আশংকাজনক অবস্থায় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কস্থ কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ।
তিনি বরিশাল জেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ।
তিনি শিশুকালে দুইবছর বয়সে মাতৃহারা এবং কৈশোরের স্কুলজীবনে ৮ম শ্রেণীতে থাকাকালীন অবস্থায় পিতৃহারা হন । তাঁর বাবা নূর বক্স হাওলাদার ছিলেন তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট সমাজসেবক এবং ব্রিটিশ আমলে তাঁর দাদা ছিলেন বরিশালের পোস্ট মাস্টার ।
ছাত্রজীবনে প্রতিটি পর্যায়ের মেধাতালিকায় শীর্ষ স্থানের অধিকারী সিরাজুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ অনার্স এবং সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে এম এ পাশ করেন । বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সরাসরি শিক্ষক ছিলেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনির হাতে শাহাদাত বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী,অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী,বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড,মুহাম্মদ আবদুল হাই, ড,নীলিমা ইব্রাহীম ,ড, দীন মুহাম্মদসহ অনেকে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ মুসলিম(এসএম হলের) হলে নিয়মিত থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ছাড়াও খন্ডকালীন সাংবাদিকতা করতেন ।
বরিশালের কামারখালি কলেজের বাংলার অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে চাকুরীর মধ্যদিয়ে তাঁর কর্মজীবনের যাত্রা শুরু । মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কলেজের কাজে ঢাকা থেকে বরিশাল ফেরার পথে তিনি পাক হানাদার বাহিনির হাতে ধৃত হন । তাঁর ডায়রিতে বঙ্গবন্ধুসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ফোন নাম্বার পাওয়ায় তাঁদের সন্দেহ বেড়ে যায় । কয়েকদিন পাকিস্তানি ক্যাম্পে বন্দী অবস্থায় অত্যাচারের শিকার হন এবং এক পর্যায়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ।
পরবর্তীতে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দি কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতার সময় সাংবাদিকতায় সরাসরি যুক্ত হন । তিনি শিক্ষকতার জীবনে কয়েকটি কলেজে অধাপনা এবং অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন ।
সাংবাদিকতায় প্রথমে ‘দৈনিক আজাদ’-এ সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন । দৈনিক ‘জনপদ’পত্রিকার সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার চোধুরী সম্পাদক থাকাকালীন সময় লন্ডন চলে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে একই পত্রিকায়(জনপদের) দীর্ঘকালীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন ।
এছাড়া তিনি ইংরেজি ওয়াল ফজর,(দি ডন) পত্রিকা,সাহিত্য ও গবেষণা পত্রিকা মাসিক তাহজীব এবং বহুল প্রচারিত পত্রিকা নিউজ লেটারের প্রধান সম্পাদক ছিলেন ।
অধ্যাপক সিরাজুল হক অখন্ড সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকাকালীন সময়ে সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনে সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী ও সাংবাদিক আনোয়ার জাহীদ প্যানেলে বিপুলভোটে কোষাধক্ষ হিসেবে নির্বাচিত হন ।
সাংবাদিকতার জীবনে তিনি বর্ষীয়ান সাংবাদিক ফাজলে রশীদ,আতাউস সামাদ,গিয়াস কামাল চৌধুরী,আনোয়ার জাহিদ,নির্মল সেন,রিয়াজ উদ্দীন আহমদ,আমানউল্লাহ কবীরসহ অনেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ।
অধ্যাপক সিরাজুল হক সাংবাদিকতা ছাড়াও সাহিত্যাঙ্গনে সংস্কৃতি মনষ্ক মানুষ । বাংলা,ইংরেজিসহ কয়েকটি ভাষায় তাঁর পান্ডিত্য রয়েছে । সাংবাদিকতা ছাড়াও ও তিনি কবি ও সাহিত্য সমালোচক ।
মৌলিক গ্রন্থের মধ্যে শিশুতোষ,
উপন্যাস,গল্প,কবিতা,প্রবন্ধ ,ভ্রমণ কাহিনি,শিশুতোষ ও গবেষণাধর্মীসহ তাঁর গ্রন্থসংখ্যা অনেক । এছাড়া তাঁর সম্পাদিত সম্পাদিত ও অনুদিত বেশ কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছে ।
উপস্থাপনার ক্ষেত্রে অধ্যাপক সিরাজুল হক বিভিন্ন সময় রেডিও টিভিতে উপস্থাপনা করেছেন ।
তিনি ইরান সরকারের চাকুরী নিয়ে তেহরান থাকা কালীন তেহরান রেডিও’র বাংলা বিভাগ ও ইংরেজি তেহরান টাইমস-এ কর্মরতঃ ছিলেন । এছাড়া ইরানে তেহরানের প্রপাগেশন সেন্টারের প্রধান হিসেবে কয়েকবছর চাকুরী করেন ।
ব্যক্তিগতভাবে একজন নিঃস্বার্থ সমাজকর্মী,মানবতাবাদী,বন্ধুপ্রিয় সদালাপী মানুষ হিসেবে এবং কর্মজীবনে সততা, কর্তব্যনিষ্ঠতায় তাঁর বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে । কর্মজীবনে তিনি সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিদের চাকুরী প্রাপ্তির ব্যাপারে নিঃস্বার্থ সহযোগিতায় তাঁর বিশেষ ভূমিকা ও সুনাম ছিল প্রসংশনীয় ।
সাংবাদিকতার জীবনে অধ্যাপক সিরাজুল হক ইরান,ইরাক,সৌদি আরব,আরব আমিরাত, ভারত,পাকিস্তান ,থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ছাড়াও গ্রিস, রোম,লিবিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন ।
পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনকালে একবার তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সফরসঙ্গী ছিলেন ।
বাংলাদেশের প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক অধ্যাপক সিরাজুল হক জাতীয় প্রেসক্লাবের জীবন সদস্য । অখন্ড সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকাকালে তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অধিকার আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ।
অধ্যাপক সিরাজুল হক দীর্ঘদিন যাবত কিডনী জনিত রোগ ও কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত অবস্থায় নিউইয়র্ক-এ চিকিৎসারতঃ অবস্থায় ছিলেন এবং সপ্তাহে তিনদিন বাধ্যতামূলক ডায়লেসিস করার মধ্যদিয়ে বেঁচে ছিলেন ।
বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক-এ(বারো বছরের অধিক সময়) তাঁর জামাত কবি ও কলামিস্ট এবিএম সালেহ উদ্দীন এবং বড় মেয়ে সাঈদা আখতার রেজভীন-এর বাসায় অবস্থান করছিলেন ।
জন্মঃ১২ ডিসেম্বর ১৯৪৭ এবং
মৃত্যুঃ ২৬ জুন ২০২৫ ।আজ শুক্রবার,বাদ জুম্মা জুন-২৭.২০২৫,
জামাইকা মুসলিম সেন্টারে অধ্যাপক সিরাজুল হকের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ।মৃতুকালে তিনি দুই কণ্যা ও দুই পুএ ,অসংখ্য।নাতি-নাতনিসহ বহু আত্মীয় স্বজন,বন্ধু-বান্ধব এবং গুনগ্যহী রেখে গেছেন । তার মৃতুতে কবি এবিএম সালেহ উদ্দিন ও সাঈদা আক্তার রেজভিন সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী ।মরহুম অধ্যাপক সিরাজুল হক এর মৃতুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন মুলধারার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এমএ সালাম,সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাকিকুল ইসলাম খোকন,সাংগঠনিক মোঃনাসির,সাংবাদিক হেলাল মাহমুদ,রাজনীতিক মাহবুবুর রহমান মিলন,সাংবাদিক আরিফুর রহমান আরিফ,ওসমান গনি,বিশ্বজিত সাহা,সুহাস বডুয়া,আইবিএননিউজ ২৪.কম সম্পাদক আয়েশা আক্তার রুবি,ফিরোজ মাহমুদ প্রমুখ এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া সংগঠন নিউজ পোর্টাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন,বাপসনিউজ,এনয়াইবিডিনিউজ সহ আরো অনেকে ।মরহুম অধ্যাপক সিরাজুল হকের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করবে সহধর্মিণী পাশে সমাহিত করা হবে ।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন