“মাত্র দশ বছর বয়সে বড়লেখায় শহীদ জিয়ার হাতে করমর্দনের মাধ্যমে তাঁর জীবনদর্শনের প্রথম স্পর্শ পাই, সেই মুহূর্তটি আজও আমার হৃদয়ে জীবন্ত হয়ে আছে”
লন্ডন, ১৫ জুন ২০২৫ ||
লন্ডনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মুদাব্বির হোসেন মুনিম রচিত ‘হৃদয়ে হৃদয়ে জিয়াউর রহমানের ছোঁয়া’ জীবনীগ্রন্থের মিডিয়া লঞ্চিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৩ জুন শুক্রবার বিকেলে লন্ডনের বাংলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এসময় লেখক মুদাব্বির হোসেন মুনিমের দুই পুত্র আদরিয়াব মোদাব্বির ও অ্যালেক্স মোদাব্বির এবং তাঁর স্কুলজীবনের বন্ধু অ্যাকাউন্টেন্ট মুহিত উদ্দিন ও মুহাম্মদ জুবায়ের আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মুদাব্বির হোসেন মুনিম বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি আমার বিশেষ অনুরাগ জন্ম নেয় । দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি যাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা ছিল- আজকের বাংলাদেশে সেই মানুষটির অভাব গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে । সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতা, বিশেষত জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রগঠন ও নেতৃত্বে যে নতুন বন্দোবস্তের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সুসংগঠিত, আত্মমর্যাদাশীল ও বাংলাদেশকেন্দ্রিক এক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রশ্নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
‘তিনি শুধুমাত্র একজন কথার মানুষ ছিলেন না; বরং তিনি কাজের মাধ্যমে নিজ আদর্শ প্রতিষ্ঠাকারী । তাঁর জীবন যেন এক অনিঃশেষ কাব্য। তাঁকে সীমিত পরিসরে উপস্থাপন করা কঠিন হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁর আদর্শের আলোয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
নিজের লেখার পেছনের অনুভূতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বইটি কোনো গবেষণামূলক গ্রন্থ নয়; বরং একজন সাধারণ নাগরিকের হৃদয়ে রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতি যে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ বেঁচে আছে, তারই এক ক্ষুদ্র প্রকাশ । তাঁর রাষ্ট্রদর্শন আজকের বাংলাদেশেও নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে । এই ক্ষুদ্র প্রয়াস তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধার নিঃস্বার্থ নিবেদন। শহীদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিজের শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, মাত্র দশ বছর বয়সে বড়লেখায় শহীদ জিয়ার হাতে করমর্দনের মাধ্যমে তাঁর জীবনদর্শনের প্রথম স্পর্শ পাই। সেই মুহূর্তটি আজও আমার হৃদয়ে জীবন্ত হয়ে আছে। তাঁর আদর্শ আমার চিন্তা, কর্ম ও মূল্যবোধকে আজীবন প্রভাবিত করে চলেছে। বইটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে মুদাব্বির হোসেন মুনিম বলেন, গ্রন্থটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রদর্শন, চিন্তা-চেতনা ও আদর্শকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার একটি আন্তরিক প্রয়াস । এতে তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা, অর্থনীতি, রাজনীতি, কৃষি, কূটনীতি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রশাসনিক দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বহুমাত্রিক দিকসমূহ উপস্থাপন করা হয়েছে। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে সাজানো হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, একে অপরের সঙ্গে সরাসরি ধারাবাহিক না হলেও পাঠক যে কোনো অধ্যায় স্বতন্ত্রভাবে পড়তে পারবেন। এতে করে পাঠক অল্প সময়ের মধ্যেই বইটির মূল বার্তা ধারণ করতে পারবেন। গ্রন্থে প্রচুর ছবি যুক্ত থাকায় পাঠকদের কাছে বিষয়বস্তু আরও জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বইটিতে শহীদ জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রদর্শনের ২৬টি আদর্শিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তা-ভাবনা ও উদ্যোগ বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষভাবে তাঁর কিছু প্রেরণাদায়ক ও ঐতিহাসিক উক্তি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। যেমন: ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’—অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার অদম্য আত্মবিশ্বাসের প্রতীক এবং ‘আই ইউল মেক দ্যা পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্যা পলিটিশিয়ান্স’—সততা ও জবাবদিহিমূলক রাজনীতির প্রতি তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার।
লেখক বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক পুনর্গঠনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রদর্শন আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বইটি বাংলায় রচিত হলেও প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে পুরো গ্রন্থটি ইংরেজিতেও অনুবাদ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুদাব্বির হোসেন মুনিম মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় জন্মগ্রহণ করেন । শৈশব থেকেই তিনি পরিবার থেকে ইসলামী মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সততার আদর্শ শিখে বড় হয়েছেন। তিনি বড়লেখা পিসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বি.কম (অনার্স) সম্পন্ন করেন । এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন । পরবর্তীতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে পেশাগত জীবন শুরু করেন । ১৯৯৮ সালে পেশাগত জীবন শুরু করে জিলেট, প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, কোকা-কোলা ও কডাকের মতো বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পান। ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যে ‘এম.এইচ.সি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টন্স’ প্রতিষ্ঠা করে সেটিকে সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন । তিনি সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ডেনমার্কের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল অব স্ক্যান্ডিনাভিয়া (আইবিএসএস) থেকে অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি আইসিএডব্লিউ (এফসিএ), আইএফএ (এফএফএ), এটিটি (এফটিটি), আইএএ (এফএআইএ) এবং আইপিএ অস্ট্রেলিয়া (এমআইপিএ)-এর ফেলো সদস্য। ছাত্রজীবনে তিতুমীর কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রদলের কল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। বড় ছেলে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ছোট ছেলে ফাইন্যান্সে পড়াশোনা করছে এবং মেয়ে আয়শা নবম শ্রেণির ছাত্রী। তাঁর স্ত্রী জোহরা মুদাব্বির যুক্তরাজ্যে একজন সফল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার হিসেবে কর্মরত।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন