বছরের শেষদিকে হবে বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ চুক্তি

gbn

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে। সম্পর্ক আরও গভীর করতে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ চলতি বছরের শেষ নাগাদ একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট-ইপিএ) সম্পন্ন করবে, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে।

শুক্রবার (৩০ মে) টোকিওতে নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন শিগেরু ইশিবা। সেখানে দুদেশের নেতাদের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 

বৈঠক শেষে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও শিগেরু ইশিবা এক যৌথ ঘোষণায় বলেছেন, দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইপিএ চুক্তি সই হবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

বৈঠকে উভয় নেতা দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ পরিসর নিয়ে আলোচনা করেন এবং কৌশলগত অংশীদারত্বের প্রতি তাদের অবিচল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

 

বাংলাদেশকে দীর্ঘদিনের বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এ যাত্রায় জাপান সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

এসময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আগের সরকারের রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যখন আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় তখন জাপানের অবিচল সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের সংস্কার প্রচেষ্টায় জাপানের সক্রিয় সহায়তা ও সহযোগিতা কামনা করি।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা সবার জন্য সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে একটি মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’

 

তিনি বলেন, ‘জাপানের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নৌ চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষা, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা, সংযোগ বৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত।’

প্রধান উপদেষ্টা ইপিএ আলোচনায় সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং উচ্চপর্যায়ের সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা আশা করি।’

তিনি মাতারবাড়ীতে একটি ভূমি-ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালীতে একটি আমদানিনির্ভর এলপিজি টার্মিনাল এবং বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী অন্তত তিন বছরের জন্য বাংলাদেশের পণ্যের জন্য জাপানের শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাপানের সমর্থন কামনা করেন।

 

তিনি আরও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ছয়-লেন বিশিষ্ট নিয়ন্ত্রিত গতির এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং মেঘনা-গোমতি নদীর ওপর একটি নতুন চার-লেনের সেতু নির্মাণের জন্য জাপানের সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা কামনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অটোমোবাইল ও বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্প, হালকা যন্ত্রপাতি, হাইটেক ইলেকট্রনিক্স এবং সৌর শিল্পে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের শিল্পখাতকে জাপানের শিল্প মূল্য শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, জাপানে শ্রমিকের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ-জাপান দক্ষ কর্মী অংশীদারত্ব কর্মসূচি’ চালু করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে লাখ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক জাপানে নিয়োগের সুযোগ পান। আরও বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও কারিগরি প্রশিক্ষক এবং পলিটেকনিক শিক্ষকদের জন্য জাপানে আরও বেশি বৃত্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।

 

অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এবং একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় জাপান সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

বৈঠকে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়, যেখানে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘সর্বোত্তম সম্পর্ক’ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জাপানের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানান।

 

প্রধানমন্ত্রী ইশিবা ৩৮ বছর আগে বাংলাদেশের সফরের স্মৃতিচারণা করেন, যখন জাপানের সহায়তায় নির্মিত যমুনা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছিল। তিনি অধ্যাপক ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে বৈশ্বিক অবদানের প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, ‘জাপানের জনগণ আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করে।’

তিনি একটি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন