৩২ নম্বর বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

gbn

সকাল ১০টা। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে ও ভেতরে কয়েক হাজার মানুষের অবস্থান। গত বুধবার রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়ির অর্ধেক অংশ ভাঙার পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সকালে গিয়ে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক্সকাভেটর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 

 

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফজরের পর থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। ভাঙা দুই ভবন এবং পেছনের বর্ধিত জাদুঘর ভবনে ঢুকে পড়ে উত্সুক জনতা। এই তিন ভবনের বিভিন্ন কাঠামো ভেঙে আসবাব, লোহা, ভাঙা গ্রিল, কাঠ যে যার মতো যা পারে নিয়ে যায়।

এদের মধ্যে কেউ কেউ বলে, হাসিনা যে অন্যায় করেছেন এবং সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করেছেন, তার প্রতিবাদে তারা ভবনের এসব অংশ খুলে নিচ্ছে।

কেউ কেউ বলেন, দম্ভের পতনের স্মৃতি হিসেবে তারা ইট নিয়ে যাচ্ছে।

 

ধ্বংসস্তূপের পাশে রিকশা রেখে কংক্রিট থেকে লোহা আলাদা করছিলেন ইব্রাহিম। তিনি এসেছেন মিরপুর থেকে। ইব্রাহিম জানান, এর আগে ৩৫ কেজি লোহা বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়ায় আবার এসেছেন।

 

ছবি: কালের কণ্ঠ

 

ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ দিয়ে বড় লোহার পাত নিয়ে যেতে দেখা যায় একজনকে। এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কী আর করব, বিক্রি করে চাল, ডাল কিনব। সবাই তো নিচ্ছে, চোখের সামনে যা পেলাম নিলাম।’

সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, পাশের ভবন ও পেছনের ছয়তলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে আগুন জ্বলতে দেখা যায়, ধোঁয়া ও তাপের মধ্যে ইব্রাহিমের মতো অন্তত শতাধিক নিম্ন আয়ের মানুষকে দেখা যায় দল বেঁধে ভারী হাতুড়ি, শাবল হাতে নানা কাঠামো ভাঙতে। কেউ কেউ স্টিল ও লোহা ভবন থেকে ভেঙে ভেঙে নিচে ফেলছে।

 

নিচে থাকা কয়েকজন এগুলো রিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। আধাভাঙা ভবনের রড কাটছিলেন সুজন নামের একজন। তিনি বলেন, ‘ভাইঙাই তো ফেলতেছে, আমরা কিছু নিয়া যাই। যা পাই, তাই লাভ।’

ছবি: কালের কণ্ঠ

 


 
ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত একদল মানুষ

শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির যে সিঁড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সে অংশটি এখনো ভাঙা হয়নি। সকাল থেকেই উত্সুক জনতাকে সিঁড়িটিতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে। সিঁড়ির পাশের দেয়ালজুড়ে থাকা গুলির চিহ্নগুলোর পাশে কালো কালিতে লেখা হয় ‘ফেরাউনের মৃত্যুস্থান’। এর কিছুটা দূরে লেখা হয় ‘একেকটা ধ্বংসস্তূপ আমাদের বিজয়ের আগাম নিশান’।

পেছনের ছয়তলা বর্ধিত জাদুঘরের ভবনটিতে শত শত মানুষ ঢুকছে আর বের হচ্ছে—এই চিত্র দেখা গেছে সকাল থেকে। ভবনটিতে থাকা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বিভিন্ন বইও হাতে হাতে নিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেককে।

সকাল থেকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নানা স্লোগান দিলেও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িটির সামনে একটি মাইক নিয়ে অবস্থান নেয় একটি দল। মাইকেও তাদের ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ, বত্রিশ না ছত্রিশ, ছত্রিশ ছত্রিশ, দালালি না আজাদি, আজাদি আজাদি, দড়ি লাগলে দড়ি নে খুনি হাসিনার ফাঁসি দে, জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

জাদুঘরের বাঁ পাশের ভবনটির পেছনে পুরনো তিনটি গাড়ির স্ক্র্যাপ দেখা যায়। এগুলো ভেঙে নিয়ে যায় একদল নিম্ন আয়ের মানুষ।

সুধা সদনেও আগুন

শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ডাকনাম ছিল সুধা মিয়া। তাঁর নামেই এ বাড়ির নামকরণ। গতকাল সকালেও ভবনটির কোথাও কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। দুপুরে বাড়িটির ভেতরে প্রচণ্ড তাপের মধ্যেই লোকজনকে রড, সোফা, চেয়ার-টেবিলসহ আধাপোড়া বিভিন্ন আসবাব, এসি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন জিনিসের ভাঙা অংশ ও তার সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

ছবি: কালের কণ্ঠ

 

নানা সরঞ্জাম বাড়ির সামনে থেকে রিকশায় তুলছিলেন সালেহা আক্তার। এসবের গন্তব্যও ভাঙ্গারির দোকান জানিয়ে সালেহা বলেন, ‘সব তো পুইড়াই গেছে, সকাল সকাল অনেকেই আইসা যা পারছে নিয়া গেছে। আমিও টুকটাক যা পাইছি নিয়া যাই। বেইচা যদি কয়ডা টেহা পাওন যায়।’

ছবি : ফোকাস বাংলা

 

নারীসহ দুজনকে গণপিটুনি

বাড়ি ভাঙার মধ্যেই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উত্সুক জনতার ভিড়ে আওয়ামী লীগ সন্দেহে এক নারীসহ দুজনকে পিটুনি দিয়েছে ছাত্র-জনতা। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এক নারীকে এবং কথা বলার সময় ‘আপার বাড়ি’ বলায় এক পুরুষের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাঁদের মারতে মারতে ধানমণ্ডি ৩২ থেকে প্রধান সড়কে নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরে এক ফটো সাংবাদিকসহ কিছু লোক তাঁদের রিকশায় উঠিয়ে দেন।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন