সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা সীমান্তে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিনদিন বেড়েই চলেছে চোরাচালান বাণিজ্য। বিজিবির পক্ষে থেকে এব্যাপারে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ না নিলেও পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে গত ২দিনে জাল টাকা, ছাপানোর মেশিন, মদ ও গাঁজার চালানসহ ৯জনকে গ্রেফতার করেছে। আজ বুধবার (২৮ ফেব্রæয়ারী) সকাল ১০টায় পৃথক ভাবে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের গত সোমবার (২৬ ফেব্রæয়ারী) রাত ১২টার পর থেকে জেলার মধ্যনগর উপজেলার বাঙ্গালভিটা, মাটিরাবন, গুলগাঁও ও তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড়, চাঁনপুর, টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, চারাগাঁও, বীরেন্দ্রনগরসহ পাশের বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি ও মাছিমপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলার একাধিক সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, কয়লা, পাথর, চিনি, সুপারী, গরু, মহিষ, ছাগল, পেয়াজ, ফুছকা, কসমেটিকস, মোটর সাইকেল, অস্ত্র ও কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল অবৈধ ভাবে পাচাঁর শুরু করে গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্স লেংড়া জামাল, রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া, হযরত আলী, বাবুল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, সোহেল মিয়া, শরাফত আলী, শামসুল মিয়া, ইয়াবা কালাম মিয়া, হোসেন আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, কামরুল মিয়া, রতন মহলদার, আক্কল আলী, শুভ্রত দাস, আবু বক্কর, রফিকুল, সাহিবুর মিয়া, বায়েজিদ মিয়া ও জসিম মিয়াগং। পরে পাঁচারকৃত অবৈধ মালামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে নানান কৌশলে পাঠানো শুরু হয়। এমতাবস্থায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই দিনরাত সাড়ে ১২টায় তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মোদেরগাঁও গ্রামের খেয়াঘাট সংলগ্ন সীমান্তের যাদুকাটা নদীর বালুর চরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গডফাদার তোতলা বাহিনীর সদস্য দীন ইসলাম (২৪), ইউনুছ আলী (২০), হযরত আলী (২৬) ও ইব্রাহিম মিয়া (১৯) কে ২০৩বোতল ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মদসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে। ওই সময় গডফাদার তোতলা আজাদ পালসার মোটর সাইকেল যোগে সুকৌশলে পালিয়ে তার কামড়াবন্দ গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। এরআগে ওই গডফাদারের ২সদস্যকে পাচাঁরকৃত ১ ট্রাক অবৈধ পেয়াজের চালানসহ তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের পোছনা নামকস্থানে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রæয়ারী) বিকেলে মধ্যনগর উপজেলা সদরের খালিছাকান্দা-নয়াপাড়া সড়কে অভিযান চালিয়ে ১১ কেজি গাঁজাসহ তোতলা বাহিনীর সদস্য মাদক ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান অপু (২৫), মোবারক হোসেন (২৮) ও রফিক মিয়া (৪২) কে গ্রেফতার করা হয়। একিকে দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজারে অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জাল নোট ও আকিলপুর গ্রাম থেকে জাল টাকা ছাপানোর মেশিনসহ আকলিছ মিয়া ও তার সহযোগী শীলা রানী রিচিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু সীমান্ত চোরাকারবারীদের গডফাদার তোতলা আজাদ ও তার সোর্সরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। তাদেরকে গ্রেফতার না করার কারণে সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি দিনদিন বেড়েই চলেছে এবং চোরাচালান বাণিজ্য করে তারা হয়েগেছে কোটিপতি। তবে সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদকে ইয়াবার চালানসহ আটক করে প্রায় ২বছর আগে গণধৌলাই দিয়েছিল এলাকাবাসী। পরে থানায় মুছলেখা দিয়ে ছাড়া পাওয়ার কারণে তার অবৈধ কর্মকান্ড আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। তাই এব্যাপারে প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
এব্যাপারে মধ্যনগর থানার ওসি এমরান হোসেন, তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম ও দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান পৃথক অভিযানে এক নারীসহ ৯জন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান- গ্রেফতারকৃদের বিরুদ্ধে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন