আইনজীবী বাপ্পী হত্যা : স্ত্রীসহ দুইজনের ফাঁসি, তিনজনের যাবজ্জীবন

চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পী (৩৩) হত্যা মামলায় স্ত্রী রাশেদা বেগম (২৭) ও হুমায়ুন রশিদ (২৮) নামে একজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

একইসঙ্গে আসামি আল আমিন (২৮), আকবর হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে সাদ্দাম (২৩) এবং মো. পারভেজ ওরফে আলীকে (২৪) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মামলার আসামি জাকির হোসেন ওরফে মোল্লা জাকিরকে (৩৫) খালাস দিয়েছেন আদালত। 

বুধবার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এদিন আসামি আল আমিন ও পারভেজকে কারাগার থেকে আদালত হাজির করানো হয়। রায় ঘোষণা শেষে তাদেরকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়। বাকি আসামিরা জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন।

রায়ের বিষয়ে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর দুলাল চন্দ্র দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই আসামিকে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। বাকি আসামি তিন আসামিকে যাবজ্জীবন এবং একজনকে আদালত খালাস দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাপ্পী ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বারের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। তার গ্রামের বাড়ি বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার চৌমুহনী এলাকায়। তার বাবার নাম আলী আহমেদ। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বাপ্পী। হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত তিনি অবিবাহিত ছিলেন বলে জানতেন আত্মীয়-স্বজনরা।

২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নগরের চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডে বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার হাত-পা ও মুখ টেপ দিয়ে মোড়ানো এবং স্পর্শকাতর অঙ্গ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনার পর বাপ্পীর বাবা আলী আহমেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান বাকলিয়া থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইয়াসিন আরাফাত। এদিকে বাপ্পী হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। আইনজীবীদের আন্দোলনের মুখে টানা অভিযান চালিয়ে ঘটনার দুদিন পর ২৭ নভেম্বর কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে রাশেদা বেগমসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একই সঙ্গে মামলাটি পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট অধিগ্রহণ করে পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে। এরপর তিনি তদন্ত করে বের করেন হত্যার নেপথ্যের কাহিনি।

যে বাড়ি থেকে বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে সে বাড়ির কেয়ারটেকার ওই সময়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে ওই নারী (রাশেদা) তার স্বামীসহ থাকবেন বলে বাসা ভাড়া নেন। ঘটনার রাতে ওই বাসায় থাকতে যান বাপ্পি। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তদন্তকারীরা জানান, দেলোয়ার নামে এক ইয়াবা পাচারকারীর স্ত্রী ছিলেন রাশেদা বেগম। স্বামীর মামলার সূত্র ধরে আইনজীবী বাপ্পীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে তারা গোপনে বিয়ে করেন।

আসামিদের গ্রেপ্তারের পর পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তারা জানিয়েছেন, আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। রাশেদাকে দুই লাখ টাকা কাবিননামায় বিয়ে করেন বাপ্পী। এ নিয়ে তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন তিনি। সেই টাকা দুই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫-১০ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা করেন রাশেদা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বন্ধু হুমায়ুনের মাধ্যমে চার যুবককে ভাড়া করেন রাশেদা। পরিকল্পনা অনুযায়ী খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে গিয়ে রাশেদা ওই পাঁচ যুবকের সহযোগিতায় বাপ্পীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

২০১৮ সালে ৫ এপ্রিল পরস্পর যোগসাজশে বাপ্পীকে হত্যার অভিযোগে রাশেদাসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালতকে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০২০ সালে ১৫ অক্টোবর আলোচিত মামলাটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। বিচারিক পর্যায়ে মামলাটিতে ২৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১২ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শেষে আজ (বুধবার) রায় ঘোষণা করেন আদালত।

জিবিডেস্ক //

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন