জিবিনিউজ24ডেস্ক//
গত কয়েক দিন ধরে শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। তার শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ারের দর হু হু করে নেমেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানিদের সব সংস্থা।
আমেরিকার বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গত সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারপর থেকেই শেয়ারের দামে ধস নেমেছে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকাতেও। সেখানে এক ধাক্কায় তৃতীয় থেকে নেমে প্রথম দশের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন আদানি। ভারতীয় ধনকুবের বর্তমানে রয়েছেন ১৭ নম্বরে।
হিন্ডেনবার্গের এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আদানিরা কারচুপি করে ধনী হয়েছেন। শেয়ার বাজারে তারা কৃত্রিমভাবে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন। এভাবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
রিপোর্টে একা গৌতম আদানি বা তার সংস্থা নয়, আদানি পরিবারের আরও একাধিক সদস্যের দিকে আঙুল তুলেছে হিন্ডেনবার্গ। নাম করে করে দেখানো হয়েছে, তারা কী কী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
হিন্ডেনবার্গের তালিকায় রয়েছেন গৌতম আদানির ভাই ও শ্যালকসহ অনেকেই। অভিযোগ, একাধিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন আদানি পরিবারের এই সদস্যেরা।
হিন্ডেনবার্গের ১০৬ পাতার রিপোর্টে বিনোদ আদানির নাম রয়েছে। অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়া সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। গৌতম আদানির বড় ভাই বিনোদ। ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি ও ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতে তার নাম জড়িয়েছিল।
স্থায়ীভাবে দুবাইতে থাকেন বিনোদ আদানি। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তার সম্পদ নজরকাড়া। কয়েক সপ্তাহ আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় বিনোদের নাম উঠে এসেছিল সবার উপরে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে রাজেশ আদানির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি গৌতমের ভাই। বর্তমানে আদানি গ্রুপের সংস্থাগুলোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন তিনি। রাজেশ হীরার বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি আমেরিকান সংস্থার।
হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, রাজেশ হীরা দুর্নীতিকাণ্ডে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) তাকে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে দু’বার রাজেশকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
গৌতম আদানির শ্যালক সমীর ভোরার নামও এসেছে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে। হীরা দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল সমীরেরও। বর্তমানে তিনি আদানিদের অস্ট্রেলিয়া বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।
ডিআরআই সমীরকেও হীরা দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম হোতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল, রিপোর্টে জানিয়েছে হিন্ডেনবার্গ। অভিযোগ, তিনি দুর্নীতি ঢাকার জন্য একাধিক মিথ্যার আশ্রয়ও নিয়েছিলেন।
এছাড়াও হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পেশায় দাঁতের চিকিৎসক। আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যান প্রীতি।
রিপোর্টে রয়েছে যতীন মেটার নামও। তার ছেলে আদানির ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। হীরা দুর্নীতির সঙ্গে তিনিও জড়িত বলে অভিযোগ।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে জানা গেছে, হীরা নিয়ে এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। আদানিরাই নাকি সেই দুর্নীতির কাণ্ডারি। কর ফাঁকি দিয়ে তারা হীরা ও সোনার গয়নার ব্যবসা চালিয়েছেন।
হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গ্রুপ। ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে তারা ‘ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা’ বলেও দাবি করেছে।
কিন্তু আদানিদের জবাবের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি শেয়ার বাজারে। তারপরেও ক্রমশ নেমেছে তাদের শেয়ারের দর। বিপর্যয়ের মুখে তড়িঘড়ি ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বাতিল করে দিয়েছেন আদানি।
এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। আদানিদের বহু কোটির শেয়ার কিনেছে এই সব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে ভারতের সাধারণ মানুষও।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন