শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে আমাদের ভূমিকা-( ১ম পর্ব)

রোকসানা আক্তার || সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) ||

অসম্ভব সুন্দর এই ধরণীতে প্রতিদিনই হাজারো ফুটফুটে শিশুর জন্ম হচ্ছে। তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হলে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে হওয়া জুরুরি। কিন্তু আমরা কি পারছি তাদের এই বিকাশে সহায়ক ভুমিকা রাখতে?

একটা শিশুর জন্মের সময় তার মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন কোষ থাকে। মস্তিস্কের এই কোষগুলোর নাম হচ্ছে ‘নিউরন’। 

এক্সন ও ডেন্ড্রাইড নামক শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে এই কোষগুলো একে অন্যের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। এভাবে একে অন্যের সাথে যুক্ত হতে পারে বলেই এদের কার্যক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। একেকটি কোষ অন্য প্রায় ১৫০০০ হাজারটি কোষের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারে। তাহলে ভাবুন তো ১০০ বিলিয়ন কোষের সংযোগ কেমন ক্ষমতা রাখে? 

নিউরনগুলোর নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর এই প্রক্রিয়াকে আমরা বলি মস্তিস্কের বিকাশ যা কিন্তু খুব বেশীদিন স্থায়ী হয় না। 

প্রথম ৩ বছর শিশুর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ সময়ে মস্তিষ্ক বিকাশের সম্ভাবনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। এর পর থেকে মস্তিষ্ক বিকাশের এই হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আমাদের ধারণা যে, শিশুরা বড় হলে এমনিতেই সবকিছু বুঝে যাবে, শিখে যাবে এমনকি লেখাপড়াটাও নিজে নিজে  শিখতে পড়তে পারবে। কিন্তু ধারণাটা একেবারেই ভুল। গবেষণায় দেখা যায় একটি ৫ বছরের শিশু কমপক্ষে ৫টি ভাষা একসাথে শেখার ক্ষমতা রাখে। সে জন্যই শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে ও এর বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে হবে। গতবছর 'মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়'এর আয়োজিত তিনদিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহন করি আমি। 'শিশুরা কিভাবে শেখে' এই বিষয়ে আমার অর্জিত জ্ঞান হতে আপনাদের জন্য তথ্যগুলো ধারাবাহিক ভাবে শেয়ার করব। 

চিত্রে বয়স অনুযায়ী মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ দেখা যাচ্ছে। জন্মের সময় যে সংযোগ থাকে তিনমাস বয়সে তা আরও বেশি হয়। আমি আগেই বলেছি কোষগুলোর নিজেদের মধ্যে এই সংযুক্তি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। তাই কোষগুলোর এই ধারাবাহিক সংযুক্তি যেন সঠিকভাবে হতে পারে তার জন্য প্রয়োজন শিশু-বান্ধব পরিবেশ। কারন  শিশু-বান্ধব পরিবেশে বড় হওয়া শিশুর সংযোগগুলো প্রচুর পরিমানে ঘটে।

চিত্রে তিনবছর বয়সের সংযোগের পরিমাণ লক্ষণীয়। শিশু-বান্ধব পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শিশুকে উদ্দীপনা দেয়া যা তার মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়ক। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে এই উদ্দীপনা দেয়াটা যেন বয়স উপযোগী হয়। 

যেমন, তিন বছরের শিশুকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর কাজ দিলে সে সেটা করতে না পেরে হতাশ হয়ে যাবে। আর যদি তিন বছরের শিশুকে তিন বছর বয়স উপযোগী কাজ  দেয়া যায়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে উৎসাহ দেয়া যায় তাহলে সেটি অনেক বেশী কার্যকরী হবে। তখন তার জড়তা কেটে যাবে, সহজেই মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে এবং উদ্দীপনাটিকে সহজে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকবে। 

মনে রাখতে হবে এই কাজগুলো আমাদের বারবার করতে হবে দক্ষতা অর্জনে ও এর স্থায়ীত্ব পেতে। আমরা যদি শিশুকে নিয়মিত উদ্দীপনা দিতে পারি তবে শিশুটি এর উপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে তার ভবিষ্যৎ জীবনটা গড়ে তুলবে।

আমরা জানি মস্তিষ্ক থেকেই মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বিকাশ সহ সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশও ঘটে থাকে। 

চিত্রে আমরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ দেখতে পাচ্ছি। এই অংশগুলো প্রত্যেকেই একেক ধরনের কাজের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত এবং প্রত্যেকটি অংশ তার নিজ নিজ কাজ করে। কিন্তু সবগুলো কাজই একই সাথে ঘটছে। 

ধরুন আমি আপনার সাথে কথা বলছি।কথা বলার সাথেও কিন্তু আমার আবেগ জড়িত, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া জড়িত। এর সবই মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

এখন প্রশ্ন হলো মস্তিষ্কে আমরা কিভাবে উদ্দীপনা দিব?

কীভাব আমরা সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করতে পারব?

মস্তিষ্কের বিকাশ ধাপে ধাপে হয়।

মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বুঝতে পারবেন কোষগুলোর ধারণ ক্ষমতা থেকে। মানসিক বিকাশের জন্য কোষের সংযোগ গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংযোগ যে হচ্ছে তা থেকে বুঝব কী করে যে কখন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে?

বিকাশের সাথে সাথে মস্তিষ্কের কোষগুলোর সংযোগটাও জরুরী।

যেমন, যদি সবার বাড়িতে একটা করে টেলিফোনে সেট থাকে, কিন্তু টেলিফোন সেটগুলোর মধ্যে কোনো সংযোগ স্হাপন করা না হয় তাহলে আমরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারব না।

সুতরাং বিষয়টি এমন যে কোষগুলো গঠন হলেও সংযোগ না ঘটলে কার্যকরী হবে না।

সংযোগ ঘটাতে আমাদের করণীয় হলো -

ধরুন আপনার শিশু হামাগুড়ি দিয়ে সামনে যাচ্ছে।আপনি নাম ধরে ডাকলেন।সে ঘাড় ফিরে পিছনে তাকাবে এবং দেখবে যে কে আছে ওখানে।এক্ষেত্রে তার অনেক গুলো কাজ কিন্তু অনেক দ্রুত ঘটে গেছে। 

যে মূহুর্তে আপনি তাকে ডাকলেন, সে চিন্তা করেছে একটা শব্দ তার কানে এসেছে। সে বুঝতে চেষ্টা করেছে শব্দটা কার? কোথা থেকে এলো?

সে অন্য দিকে তাকায়নি, শব্দের উৎসের দিকে তাকিয়েছে। এই যে সে বুঝতে পারলো ও তাকাল,তৎক্ষনাৎ দুটি কোষের মধ্যে সংযোগ ঘটে গেল।

শিশুকে উদ্দীপনা দিতে তাদেরকে গল্প বলা একটা চমৎকার মাধ্যম। কারণ গল্পে অনেক চরিত্র থাকে,প্রচুর ঘটনা থাকে, প্রচুর রংয়ের ছড়াছড়ি থাকে। 

আমরা অনেক কথা জিজ্ঞেস করে শিশুকে নিয়ে চরিত্রের মধ্যে চলে যেতে পারি। 

এই কাজগুলো যখন আমরা শিশুর সাথে করি তখন শিশুর মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটতে থাকে। শিশুর মস্তিষ্কের এই সংযোগগুলো যাতে ঘটে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।কারণ এই সংযোগ স্থাপন করার ক্ষমতা দ্রুত শেষ হয়ে যায়।

অভিভাবকদের করণীয় ---

★আপনার শিশুর সাথে খেলা করুন, কথা বলুন ও তাদের কথা শুনুন। 

★আপনার শিশুকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান।

★আপনার শিশুর ভালো কাজের প্রশংসা করুন। 

★শিশুর প্রতি আপনার আদর ও ভালবাসার প্রকাশ ঘটান।

চলবে......

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন