ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবা : কেমন হবে জান্নাত-জাহান্নাম

gbn

শায়খ জামাল আবদি নাসির ::

এই সপ্তাহের জুমার খুতবায় আমি সেই দিনের কিছু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বিচার দিবস। যেদিন আকাশ চিরে যাবে। পৃথিবী ফেটে পড়বে। ফেরেশতাগণ অবতরণ করবেন। এবং প্রতিটি মানুষ তার কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই কিয়ামতের সময় আসবেই । আমি সেটাকে গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেককে তার চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিফল দেওয়া যায়।- সূরা তোয়া-হা (২০:১৫) সে দিন আসন্ন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ প্রস্তুত নয় । আমরা আমাদের ক্যারিয়ার, পরিবার, অবসর—এসবের জন্য পরিকল্পনা করি । কিন্তু ক'জন আমরা পরকালের জন্য পরিকল্পনা করি? সেদিন গোপন জিনিস প্রকাশিত হবে। ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) তার পূর্ণ রূপে প্রকাশ হবেন । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তাঁর ৬০০টি পাখা আছে । যদি মাত্র একটি পাখা খোলা হয়, তা পুরো আকাশকে ঢেকে ফেলবে । মানুষ তাঁকে দেখবে । তারা ফেরেশতাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে । তারা তখন কথা বলবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ অনুমতি দেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: তাদের সতর্ক করে দাও, হে মুহাম্মাদ, সেই অনুশোচনার দিনের ব্যাপারে, যখন সবকিছু নিষ্পত্তি হয়ে যাবে; অথচ তারা উদাসীন এবং বিশ্বাস করে না।-সূরা মারইয়াম (১৯:৩৯) সেদিন আর কিছু করার সময় থাকবে না । আরেকটি ভালো কাজ করার সময় থাকবে না। আরেকটি সিজদাহ দেওয়ার সময় থাকবে না। সেটা বিচার দিবস—আমল করার দিন নয়। মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হবে। প্রথম দল, যারা আল্লাহর নিদর্শন উপেক্ষা করেছে। যারা অবাধ্য ছিল। যারা তাওবা করতে দেরি করেছে । তাদের হাত-পা শৃঙ্খলে বাঁধা হবে । কাঠের মতো জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । তারা অনুতপ্ত হবে। কিন্তু তখন দেরি হয়ে যাবে। তারা চিৎকার করে বলবে: হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদের ঘুমের স্থান থেকে উঠিয়ে দিল? (উত্তর আসবে) “এটাই তো দয়াময়ের প্রতিশ্রুতি এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন।— সূরা ইয়াসিন (৩৬:৫২) দ্বিতীয় দল হলো মু’মিনগণ। যারা আনুগত্যে জীবন অতিবাহিত করেছে। যারা নামাজ পড়েছে, রোজা রেখেছে এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থেকেছে। তারা আনন্দের সাথে উঠবে। তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাতে আগ্রহী হবে। তারা তাঁর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেছিল। তারা তাঁর আদেশ মেনে চলেছিল। তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন এক অসাধারণ স্থান। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জান্নাতে তুমি চিরকাল থাকবে। কোনো মৃত্যু নেই । তুমি চিরযৌবনে থাকবে । বার্ধক্য নেই । তুমি সুস্থ থাকবে । কোনো ব্যথা বা অসুস্থতা নেই। তুমি শান্তিতে থাকবে। কোনো দুঃখ বা বিদ্বেষ নেই। জান্নাতে তোমার যা কিছু ইচ্ছা, সব থাকবে। কোনো হিংসা নেই। কোনো শত্রুতা নেই। কেবল ভালোবাসা ও সম্প্রীতি । এটি তাদের জন্য পুরস্কার, যারা প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারি না। আমাদের চারটি বিপদ থেকে বাঁচতে হবে: আমাদের নিজের নফস — যদি আমরা আমাদের খেয়াল-খুশি নিয়ন্ত্রণ না করি, তাহলে সেগুলোই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। খারাপ বন্ধু — একটি ভুল সঙ্গী তোমাকে আল্লাহ থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে। এই দুনিয়া — দেখতে সুন্দর, কিন্তু এটা একটি পরীক্ষা। এটা অস্থায়ী। শয়তান — সে কুমন্ত্রণা দেয়, বিভ্রান্ত করে। এবং আমরা কখনও কখনও তাকে আল্লাহর চেয়ে বেশি মেনে চলি। তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে । নিজেদের নিয়মিত যাচাই করতে হবে। আমার সালাত কেমন? আমার অন্তর কেমন? আমি কি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত?

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, সে যেন পূর্ণ ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করে এবং মানুষের সাথে এমন আচরণ করে, যেমনটি সে নিজের জন্য কামনা করে।” সহজ কথা । কিন্তু গভীর । তোমার ঈমানকে দৃঢ় রাখো। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করো। আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হও।

আজকের জুমআর পরে আমরা জানাজা পড়বো, তাদের জন্য যারা মাত্র কয়েকদিন আগেও আমাদের সঙ্গে ছিল । আগামীকাল সেটা আমাদের হতে পারে। আসুন, আমরা অনুতপ্তদের দলভুক্ত না হই। আমরা যেন কৃতজ্ঞদের দলে থাকি।

হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করো। আমাদের ঈমানে দৃঢ় করো। আমাদের উদাসীনতা থেকে রক্ষা করো । আমাদের গুনাহ ক্ষমা করো। এবং মৃত্যুর আগে আমাদের শেষ উচ্চারণ যেন হয়— “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”

শায়খ জামাল আবদি নাসির : অতিথি খতিব । ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার। ২৫ জুলাই ২০২৫

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন