শায়েস্তাগঞ্জ( হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :
দরিদ্র্যতা ও অর্থ সঙ্কট দমিয়ে রাখতে পারেনি অনুকুল চন্দ্র শীলের সন্তান অন্নপূর্ণা রাণী শীলকে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ভালো কোন কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার ইচ্ছে তার। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে বড় ব্যাংকার হতে চায় অন্নপূর্ণা।
অভাব নামক এক অদৃশ্য দানব তার আগামী দিনের লালিত স্বপ্নকে অংকুরেই শংকায় ফেলেছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের অনুকুল চন্দ্র শীলের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তৃতীয় অন্নপূর্ণা । বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই তাদের। অন্নপূর্ণার বড় বোন স্বর্ণা রাণী শীল হবিগঞ্জ সরকারি নার্সিং কলেজে পড়ে,
মেঝো বোন সোনালী রাণী শীল বৃন্দাবন সরকারি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই অভি চন্দ্র শীল চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। একার রোজগারে সন্তানদের লেখাপড়া, ৬ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনুকূল চন্দ্র শীলের। মেয়েকে ঢাকা কিংবা সিলেট শহরের ভালো কলেজে লেখা-পড়ার খরচ জোগাবে কোথায় থেকে। শিক্ষকদের সাহায্য-সহযোগিতায় সে শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। অন্নপূর্ণা জানায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ মিয়া সাজু বিনা টাকায় তাকে হিসাব বিজ্ঞান পড়িয়েছেন। শিক্ষক সুয়েব মিয়া ' তুমি পারবে' বলে সব সময় তাকে উৎসাহ দিতেন। বানিজ্য বিভাগের ছাত্রী অন্নপূর্ণা বড় ব্যাংকার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। কিন্তু দরিদ্র বাবা পারবেন কি তার সে সাধ পুরণ করতে?
অন্নপূর্ণার মা রীতা রাণী শীল মেয়ের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে বলেন, অনেক কষ্ট করতে হয়েছে মেয়েকে। সে শুধু একটা কথাই বলতো ‘মা যত কষ্টই হোক আমাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।’
বাবা অনুকূল চন্দ্র শীল জানান, সেলুনে কাজ করে সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো কঠিন। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন তার চিন্তার শেষ নেই। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তিনি।
শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আবিদুর রহমান জানান, অন্নপূর্ণার মেধার কাছে হার মেনেছে সব বাধা। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় সম্ভব সব রকম সহযোগিতাই তিনি করেছেন তাকে। ভবিষ্যতে সহযোগিতা পেলে সে তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারবে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন