কেন ধীরগতির ট্রেনে ভ্রমণ করেন কিম, কী আছে এতে?

gbn

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সোমবার পিয়ংইয়ং থেকে তার সবুজ ট্রেনে করে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বহু দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা এভাবেই বিশেষায়িত ধীরগতি ট্রেনে ভ্রমণ করে আসছেন।

দেশটির যাত্রীবাহী বিমানের তুলনায় এসব বুলেটপ্রুফ ট্রেন অনেক বেশি নিরাপদ এবং আরামদায়ক। এখানে থাকে বৃহৎ সফরসঙ্গী দল, নিরাপত্তারক্ষী, খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।

পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও এ এক আদর্শ পরিবেশ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

 

ট্রেনের ভেতরে কী থাকে?

উত্তর কোরিয়ার নেতারা আসলে কতগুলো ট্রেন ব্যবহার করেছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ আহন বিয়ং-মিনের মতে, নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিক ট্রেন ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি ট্রেনে সাধারণত ১০ থেকে ১৫টি বগি থাকে।

এর মধ্যে কিছু বগি একান্তভাবে কিমের জন্য সংরক্ষিত থাকে, যেখানে শয়নকক্ষও থাকে। অন্যান্য বগিতে অবস্থান করেন নিরাপত্তারক্ষী ও চিকিৎসক দল।

 

ট্রেনে থাকে কিমের ব্যক্তিগত অফিস, যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেস্টুরেন্ট এবং এমনকি দুটি সাঁজোয়া মার্সিডিজ গাড়ি বহনের জন্যও বগি।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, কিম সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে সবুজ বগির বাইরে সিগারেট বিরতি নিচ্ছেন।

বগির গায়ে খোদাই করা রয়েছে সোনালি প্রতীক ও অলঙ্করণ। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, কাঠের দেয়ালঘেরা একটি অফিস কক্ষে কিম বসে আছেন উত্তর কোরিয়ার পতাকা ও সোনালি প্রতীকের সামনে।

 

কিমের ডেস্কে রাখা ছিল সোনালি চিহ্নযুক্ত ল্যাপটপ, কয়েকটি টেলিফোন, তার সিগারেটের বক্স এবং নীল ও স্বচ্ছ পানীয় ভর্তি বোতল। জানালাগুলো সাজানো ছিল নীল-সোনালি পর্দায়।

২০১৮ সালে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কিম একটি প্রশস্ত বগিতে গোলাপি সোফা-ঘেরা পরিবেশে শীর্ষ চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।

 

২০২০ সালে আবার দেখা যায়, এক ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে ট্রেনে যাচ্ছেন কিম। সেসময় ক্যামেরায় ধরা পড়ে ফুলের আকৃতির আলোকসজ্জা আর জেব্রা নকশার কাপড়ের চেয়ারে সাজানো একটি বগি।

রাশিয়ার সাবেক কর্মকর্তা কনস্তান্তিন পুলিকভস্কি তার ২০০২ সালের বই ‘অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’-এ কিম জং ইল (কিম জং উনের বাবা) এর মস্কো সফরের বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ট্রেনে থাকত ফ্রান্স থেকে আনা বোর্দো ও বোঝোলাই ওয়াইন, এমনকি জীবন্ত লবস্টারও পরিবেশিত হতো।

২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের জন্য কিম জং উন যখন রাশিয়ায় ট্রেনে গিয়েছিলেন, তখন সীমান্ত স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনের চাকাগুলো পুনঃসংযোজন করতে হয়েছিল। কারণ, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার রেলপথের গেজ ভিন্ন। এ তথ্য জানান দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ আহন।

ব্

তবে চীনে যেতে গেলে এমন জটিলতা নেই। কিন্তু সীমান্ত অতিক্রম করার পর ট্রেনটি চীনা লোকোমোটিভ দিয়ে টানা হয়। কারণ স্থানীয় চালকরা রেলসিগন্যাল ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ভালো জানেন। এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক ট্রেন ইঞ্জিনিয়ার কিম হান-টে, যিনি উত্তর কোরিয়ার রেলব্যবস্থা নিয়ে একটি বই লিখেছেন।

চীনে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে পূর্ববর্তী সফরগুলোতে কিমের বিশেষ ট্রেন সাধারণত সবুজ রঙের চীনা তৈরিডিএফ১১জেড লোকোমোটিভ দিয়ে টানা হতো। এগুলোতে চায়না রেলওয়ে করপোরেশনের প্রতীক খোদাই করা থাকত এবং বিভিন্ন সিরিয়াল নাম্বার বহন করত।

২০১৯ সালে ভিয়েতনামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে চীন অতিক্রম করার সময় কিমের ট্রেন টেনেছিল একটি লাল-হলুদ লোকোমোটিভ, যাতে চীনের জাতীয় রেলওয়ের লোগো খোদাই করা ছিল।

গতি প্রসঙ্গে আহন জানান, চীনের নেটওয়ার্কে কিমের ট্রেন সর্বোচ্চ ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে, যেখানে উত্তর কোরিয়ার রেলপথে গতি সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার।

কারা ব্যবহার করেন এই ট্রেন?

উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং কিম জং উনের দাদা কিম ইল সুং ১৯৯৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়মিত বিদেশ সফরে ট্রেন ব্যবহার করতেন। কিম জং উনের বাবা কিম জং ইল একমাত্র ট্রেনেই রাশিয়া সফর করেছিলেন তিনবার। এর মধ্যে ২০০১ সালে তিনি প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে মস্কো পৌঁছান।

২০১১ সালের শেষ দিকে তিনি একটি ট্রেন সফরের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার ব্যবহৃত বগিটি বর্তমানে তার সমাধিসৌধে প্রদর্শিত হচ্ছে।

এই ট্রেন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রচারণারও একটি বড় অংশ। কিম পরিবারকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ ট্রেন সফরে দেখা যায়, যা জনগণের প্রতি তাদের আন্তরিকতা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কিম জং উনের একটি দীর্ঘ ট্রেন সফরের ভিডিও প্রচারিত হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, তিনি ভুট্টাক্ষেত পরিদর্শন করছেন এবং ‘কমিউনিস্ট ইউটোপিয়া’ প্রচারের জন্য দেশজুড়ে ক্লান্তিকর ট্রেন ভ্রমণে বের হয়েছেন।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন