যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গৃহহীন মানুষদের ‘অবিলম্বে’ সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই শহরের অপরাধ দমনে ও রাজধানীকে ‘আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিরাপদ ও সুন্দর’ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গৃহহীনদের সরে যাওয়ার নির্দেশ তারই অংশ।
এদিকে, শহরের মেয়র মুরিয়েল বাউজার ট্রাম্পের এই নির্দেশের বিরোধিতা করেছেন ও হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন ডিসিকে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সঙ্গে তুলনা করাকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন।
গত মাসে ট্রাম্প একটি আদেশে গৃহহীনদের গ্রেফতার করা সহজ করেন ও গত সপ্তাহে ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ডিসির রাস্তায় নামানোর নির্দেশ দেন।
রোববার (১০ আগস্ট) ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, গৃহহীনদের এখনই সরে যেতে হবে। আমরা থাকার জায়গা দেব, তবে রাজধানী থেকে অনেক দূরে। অপরাধীরা, তোমাদের সরতে হবে না, আমরাই তোমাদের তাদের জেলে পাঠাবো। আমরা আমাদের রাজধানী ফেরত চাই। কোনো ‘ভদ্রতা’ দেখানো হবে না।
প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখনো জানা যায়নি। তবে ২০২২ সালের এক বক্তব্যে ট্রাম্প প্রস্তাব করেছিলেন, শহরের বাইরে সস্তা জমিতে গৃহহীনদের জন্য ‘উচ্চমানের’ তাঁবু স্থাপন করা হবে। সেখানে শৌচাগার ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা থাকবে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) ট্রাম্প ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়া অপরাধ দমনের জন্য ইউএস পার্ক পুলিশ, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ), এফবিআই ও ইউএস মার্শাল সার্ভিসসহ ফেডারেল এজেন্ট মোতায়েনের নির্দেশ দেন। হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওকে (এনপিআর) জানান, শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে প্রায় ৪৫০ জন ফেডারেল অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডোজ) এক সাবেক কর্মী গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় হামলার শিকার হন। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীর রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করেন।
তবে মেয়র বাউজার এমএসএনবিসিকে বলেন, ২০২৩ সালের একটা সময় আমাদের শহরে অপরাধের হার বেড়েছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। গত দুই বছরে আমরা সহিংস অপরাধ কমিয়ে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এনেছি। তিনি হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলারের রাজধানীকে ‘বাগদাদের চেয়েও সহিংস’ বলার মন্তব্যকে অতিরঞ্জিত ও ভুল বলে অভিহিত করেন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরের তুলনায় ডিসিতে হত্যাকাণ্ডের হার তুলনামূলক বেশি। চলতি বছর এই শহরে এখন পর্যন্ত ৯৮টি হত্যাকাণ্ড রেকর্ড হয়েছে। তবে ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট সহিংস অপরাধের হার ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল, যার মধ্যে ছিনতাই, হামলা ও ডাকাতি অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে, ট্রাম্প সোমবার (১১ আগস্ট) হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করে সহিংস অপরাধ দমনের পরিকল্পনা প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সকাল ১০টার দিকে ‘অপরাধ, হত্যা ও মৃত্যু’ বন্ধ করার পাশাপাশি শহরের ‘পুনর্গঠন’ নিয়ে আলোচনা হবে।
তিনি ডিসির মেয়র বাউজারকে ‘ভালো মানুষ’ বলে উল্লেখ করলেও দাবি করেছেন, তার প্রচেষ্টার পরও শহরের অপরাধ পরিস্থিতি ‘খারাপ’ হচ্ছে ও রাজধানী ‘নোংরা ও কম আকর্ষণীয়’ হয়ে উঠছে।
ওয়াশিংটন ডিসির প্রায় ৭ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৭৮২ জন গৃহহীন, যাদের বেশিরভাগই সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র বা জরুরি আশ্রয়ে থাকেন। তাছাড়া প্রায় ৮০০ জনকে ‘রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীন’ হিসেবে ধরা হয়।
একটি জেলা হিসেবে ডিসি সরাসরি ফেডারেল সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকে ও কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় আইন বাতিলের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে রয়েছে। তবে পুলিশ বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ট্রাম্পের হুমকির জবাবে বাউজার বলেন, আমাদের আইন অনুযায়ী, খুব নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই প্রেসিডেন্ট পুলিশ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন, আর সেসব শর্ত এখন বিদ্যমান নয়।
ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বাধীন শহর প্রশাসনের সমালোচনায় ট্রাম্পের অতীত রেকর্ড রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস প্রশাসনের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়ান, যখন অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় নিয়ে সৃষ্ট অস্থিরতায় তিনি হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য পাঠান। ওই পদক্ষেপ নিয়ে আইনি লড়াই চলছে, যার শুনানি সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালতে শুরু হবে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন