সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মনজুর আহমদের হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘সুনামপুর, ইসলামপুর ও আহমদপুরে’র সর্বস্তরের জনগণের উদ্যোগে ২৮ জুলাই সোমবার সুনামপুর বাজারে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম ও ছাত্রছাত্রী সহ ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অতি দ্রæত মনজুর আহমদের হত্যার রহস্য ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবী জানান প্রশাসনের প্রতি। গত ২৩ জুলাই বুধবার সকালে সুনামপুর ও নগর গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী স্টীলের সেতুর পাশের জংলায় মনজুরের লাশ পাওয়া যায়। একটি গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় মনজুরের ফুলে যাওয়া ও পচন ধরা লাশ এসে উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ১৯ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সুনামপুর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিঁখোজ হন মনজুর আহমদ। তার নিঁখোজের পর সন্ধান চেয়ে থানায় জিডি করা হয়। কিন্তু পুলিশ কোন সন্ধান দিতে পারে নি। এমন কি কোন তৎপরতাও পুলিশ দেখায় নি বলে জানান মনজুরের পরিবার।
২৩ জুলাই লাশ উদ্ধারের এক সাপ্তাহ চলে গেলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন বা হত্যার তদন্তের জন্য পুলিশের কোন কর্মকাÐ এখনো দৃশ্যমান হয় নি। এলাকার এমন ভালো একটি ছেলেকে কে বা কারা হত্যা করলো, এবং কেন করলো তার কোন রকম তদন্ত এখনো চলমান আছে কিনা তা জানতে না পেরে, বা পুলিশের কোন তৎপরতা দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী। তারা অবিলম্বে মনজুর হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত সবাই বলেন, মনজুর আহমদ একজন শিক্ষিত ও মার্জিত যুবক। এলাকার একজন নির্বিরোধী ও সজ্জন ছেলে হিসেবে মনজুর সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তার কোন প্রকাশ্য শত্রæ ছিলো না। তারা বলেন, আজ এতোদিন হয়ে গেলো পুলিশ কিছুই করতে পারে নি। মনজুরের মতো ঢাকাদক্ষিণ বাজারের একজন ব্যবসায়ী যদি নিরাপদ না হন, তাহলে সাধারণ জনগন কিভাবে নিরাপদ থাকবেন। তারা ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেন। পুলিশ এখনো মনজুর আহমদ হত্যার কোন একটি ক্লুও উদঘাটন করতে পারে নি বলে উপস্থিত সবাই পুলিশের প্রতি ক্ষোভ জানান। তারা পুলিশের স্বদিচ্ছা কামনা করেন।
এই প্রতিবাদ ও মানববন্ধনে মনজুর আহমদের ছোট ভাই কামরুল হাসান বলেন, তার ভাইয়ের কোন শত্রæ ছিলো না। তার ভাই কোনদিন কাউকে আঘাত করে কথা বলেন নি। তিনি তার ভাইয়ের এমন হত্যাকাÐের সুবিচার চান। এসময় কামরুল হাসান জানান, তার এই সহজ সরল ভাইটির উপরও কয়েকটি মিথ্যা মামলা ছিলো। যা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম, সাবেক ইউপি সদস্য ফারুক মিয়া, আব্দুল করিম কাশিমী, মছলম উদ্দিন খাঁন একাডেমির প্রধান শিক্ষক এনামুল হক, পশ্চিম সুনামপুর জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল কাদির লতিফি, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি কামরুজ্জামান জোনাক, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াহিয়া আহমেদ দুলাল, গোলাপগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, হাজী মফিজ উদ্দিন, মনোয়ার হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম, সফিক উদ্দিন, নিহত মনজুর আহমদের ভাই কামরুল হাসান। এসময় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, রেশম উদ্দিন, রফিক উদ্দিন, শরফ উদ্দিন, ইউপি সদস্য রাজু আহমেদ, জালাল আহমদ, আমীর হোসেন, জমির আহমদ, নাজমুল ইসলাম, পারভেজ আহমেদ, শাপলু আহমেদ, রুবেল আহমদ, শামীম আহমদ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকার বিভিন্ন স্তরের লোকজন।
এদিকে গোলাপগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মোল্লার সাথে কথা বলে জানা যায় যে, পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছে মনজুর আহমদ আত্মহত্যা করেছেন। তিনি জানান, পুলিশ মনজুরের ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায় আছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে তাদের সাধারণ তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিলেট এম.সি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক ছাত্র ও ঢাকাদক্ষিণ বাজারের ব্যবসায়ী মনজুর আহমদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার আত্মীয় স্বজন সহ এলাকাবাসী। তাদের সবার একটিই দাবী, মনজুর আহমদের হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে হবে, এবং দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন