সিলেটে ‘সিরিয়াল দখল’র পর বাসা ফিরে পেলেন প্রবাসী

gbn

সিলেট মহানগরীর কানিশাইল শামীমাবাদ আবাসিক এলাকা। ১৪ শতক জায়গা কিনে একাংশের ৯ শতকের উপর পাঁচতলা ভবন করেছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. আলম বেগ। কিন্তু স্বপ্নের সেই বাসা ছিল না তার দখলে। ৭ বছর ধরে বাসাটি দখলে ছিল যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের। আর ৫ আগস্টের পর দখলদাররা গা ঢাকা দিলে বাসার নতুন দখলদার হিসেবে আর্বিভূত হন এক ছাত্রদল নেতা।

 

 

 

দেশে ফিরে প্রয়াত বাবার তৈরি বাসায় উঠতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি পান আলম বেগের ছেলে সোহেল বেগ। ‘সিরিয়াল দখল’র অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত এসএমপি কমিশনারের কঠোর পদক্ষেপে বাসাটি ফিরে পেয়েছেন আলম বেগের পরিবার। কিন্তু এখনো আওয়ামী লীগ নেতার এক ভাইয়ের দখলে রয়ে গেছে বেশ কিছু জায়গা। এই জায়গার দখল এখনো বুঝে পাননি তারা।

 

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর রোডে ১৪ শতক জায়গা ক্রয় করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলম বেগ। ২০০৪ সালে ৯ শতকের উপর তিনি গড়ে তুলেন ৫ তলা ভবন। নাম দেন ‘মাতৃমহল’। ২০১৮ সালে বাসাটি দখল করেন যুবলীগ নেতা শামীম খান ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমদ। দখলের পর তারা বাসার নামও পাল্টে রাখেন ‘হোয়াইট হাউজ’। পাঁচতলা বাসা থেকে মাসে মাসে ভাড়া আদায় করতে থাকেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দখলদাররা। এরপর থেকে অনেক চেষ্টা-তদবির করেও বাসাটির দখল ফেরত পাননি আলম বেগ। দখল ফিরে না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে ২০২২ সালে মারা যান আলম বেগ।

 

 

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পালাবদলের পর পালিয়ে যান দখলদার যুবলীগ নেতা শামীম খান ও ছাত্রলীগের তুষার। এই সুযোগে বাসাটির দখল নেন সিলেট মহানগর ছাত্রদলের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক এস এম ফাহিম। এরপর থেকে তিনি বাসাটি থেকে ভাড়া আদায় করছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আলম বেগের বড় ছেলে সোহেল বেগ দেশে ফিরে মালিকানা দাবি করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন ছাত্রদল নেতা ফাহিম। বাধ্য হয়ে সোহেল বেগ গত ২ জুন ফাহিমসহ ৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশী তদন্তে দখল ও জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. রেজাউল করিমের কঠোর হস্তক্ষেপে অবশেষে বাসাটি দখলমুক্ত হয়।

 

 


গত মঙ্গলবার বিকেলে বাসাটি দখলমুক্ত করে আলম বেগের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ উপলক্ষে আলম বেগের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে মহানগর জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

 

রাজনৈতিক পরিচয়ে দখলবাজি অত্যন্ত নিন্দনীয় উল্লেখ করে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, প্রবাসীরা সাদামনের। মাতৃভূমির টানে তারা দেশে বিনিয়োগ করেন, বাসাবাড়ি করেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে তাদের সম্পদ দখল অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। অনেক সময় প্রশাসনও এরকম কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। শামীমাবাদে প্রবাসীর বাসা উদ্ধারের ঘটনায় দখলবাজরা একটি বার্তা পেয়েছে। যারা স্বৈরাচার আমল থেকে বিভিন্ন প্রবাসীর সম্পদ দখল করে আছে তারা এখনই সেগুলো ত্যাগ করা উচিত।

 

 

এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রবাসী পরিবারের অভিযোগ পেয়ে আমরা কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখেছি বাড়ির প্রকৃত মালিক আলম বেগের পরিবার। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বাড়িটি দখল মুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যারা এখনও অবৈধ দখলদার আছেন, তারা নিজ থেকে মালিকদের কাছে জমি বুঝিয়ে দিবেন। অন্যথায় আইন প্রয়োগ করা হলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দখল ছাড়তে হবে, জেলও খাটতে হবে।’

জিবি নিউজ প্রতিনিধি//

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন