বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩-২০২৫ চক্রের ফাইনাল শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার। প্রথম দিনে দেখা গেছে বোলারদের দাপট। এদিন মোট ১৪ উইকেটের পতন হয়েছে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয়ে গেছে ২১২ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা ৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। আরেক পেসার মার্কো জানসেন নিয়েছেন ৩ উইকেট।
এরপর রাবাদা-জানসেনদের জবাব দিয়েছেন মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউডরা। তারা দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। এই ৪ উইকেটের বিনিময়ে প্রোটিয়ারা সংগ্রহ করেছে ৪৩ রান।
ঐতিহাসিক লর্ডস স্টেডিয়ামে বোলারদের দাপটের বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন দর্শকরা। বেশ কয়েকটি রেকর্ডও হয়েছে এদিন। লেখা হয়েছে ভাঙা-গড়ার গল্পও।
ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম দেখা গেল যে চিত্র:
বুধবার উভয় দলের এক নম্বর (ব্যাটিং অর্ডার অনুসারে) কোনো রান করতে পারেননি। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খাজা ২০ বল খেলে ০ রানে আউট হন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার এইডেন মার্করাম ৬ বলে ০ রানে সাজঘরে ফেরেন। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমবার টেস্ট খেলা হওয়ার পর (ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া, দ্য ওভাল) এই প্রথম এমন কিছু দেখা গেল। ইংল্যান্ডে খেলা ৫৬১টি টেস্টে প্রথমবার উভয় দলের প্রথম ইনিংসে এক নম্বর ব্যাটাররা শূন্য রানে আউট হলেন।
সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসের পাতায় এটি ১০তম ম্যাচ, যেখানে উভয় দলের এক নম্বর ব্যাটাররা প্রথম ইনিংসে ০ রানে আউট হয়েছেন।
ইতিহাসের পাতায় রাবাদা:
প্রথম দিনের নায়ক ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। অসাধারণ এক বোলিং স্পেল উপহার দেন তিনি। ৫১ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন অস্ট্রেলিয়াকে ধ্বংস করে দেন এবং নিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে আরও এক ধাপ ওপরে নিয়ে যান ।
এই পারফরম্যান্সের মাধ্যমে রাবাদা ছাড়িয়ে যান কিংবদন্তি পেসার অ্যালান ডোনাল্ডকে, যিনি ৭২ টেস্টে নিয়েছিলেন ৩৩০ উইকেট। রাবাদা এখন ৭১ টেস্টে ৩৩২ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ৫ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বোলার হলেন রাবাদা। এর আগে কেবল নিউজিল্যান্ডের কাইল জেমিসন ২০২১ সালের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।
এছাড়াও এটি বড় আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো বোলারের মাত্র দ্বিতীয় ফাইফার। এর আগে ১৯৯৮ আইসিসি নকআউট ট্রফির ফাইনালে জ্যাক ক্যালিস ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।
স্টিভ স্মিথের দুই রেকর্ড:
অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ ব্যাটার স্টিভ স্মিথ দলের বিপদে হাল ধরেন। চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে দারুণ ধৈর্য দেখিয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার গতিময় বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ১১২ বল মোকাবেলা করে ৬৬ রান করেন তিনি। লড়াকু হাফসেঞ্চুরি করে দুটি রেকর্ড করেন স্টিভ স্মিথ।
আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে সপ্তমবারের মতো পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেন স্মিথ। এতে তিনি ছাড়িয়ে যান ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচিন টেন্ডুলকারকে, যিনি ১৫টি আইসিসি নকআউটে খেলেছিলেন ৬টি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ভারতেরই বিরাট কোহলি, যিনি ৯ বার এই কীর্তি গড়েছেন।
এছাড়াও ৬৬ রানের ইনিংস স্মিথকে লর্ডসে টেস্টে সর্বাধিক রান করা বিদেশি ব্যাটারদের তালিকার শীর্ষে নিয়ে যায়। তার রানসংখ্যা দাঁড়ায় ৫৭৮। যার মাধ্যমে তিনি ছাড়িয়ে যান ওয়ারেন বার্ডসলে (৫৭৫), স্যার গারফিল্ড সোবার্স (৫৭১), স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (৫৫১), শিবনারায়ণ চন্দরপলকে (৫১২)।
অ্যালেক্স ক্যারের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড:
বুধবার অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ড করেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারে। বাঁহাতি এই ব্যাটার সাত নম্বরে পিচে আসেন। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে বিউ ওয়েবস্টারের ৪৬ রানের জুটি গড়েন। চা বিরতির পর কেশভ মহারাজের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ক্যারে। এই আউট হওয়ার মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে নাম লেখান তিনি।
২০১৪ সালের পর টেস্টে স্পিনারদের বিপক্ষে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ষষ্ঠবারের মতো আউট হলেন ক্যারে। এটি ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই তালিকার শীর্ষে আছেন শ্রীলঙ্কার নিরোশন ডিকওয়েলা, যিনি সাতবার এভাবে আউট হয়েছেন।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন