তীব্র গরম তারপর এক পশলা বৃষ্টি। এই গরম তো এই ঠান্ডা, এমন আবহাওয়ায় অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, সর্দি-কাশিতে। অনেক সময় সাধারণ জ্বর মনে হলেও এটি হতে পারে কোনো ভাইরাস জ্বর। কারণ বর্ষায় পানিবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের সংক্রমণ যেমন বেড়ে যায় তেমনি এখন চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট।
এই সবগুলোর প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তাহলে আপনি এসময় জ্বরে আক্রান্ত হলে কীভাবে বুঝবেন সেটি সাধারণ জ্বর নাকি কোনো ভাইরাসের লক্ষণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক জ্বরের সঙ্গে আর কোন লক্ষণগুলোর দিকে নজর রাখবেন-
সাধারণ ভাইরাস জ্বর কীভাবে বুঝবেন?
>> খুব বেশি জ্বর নাও হতে পারে। হালকা গা গরম থেকেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ভাইরাল ফ্লু।
>> জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, দুর্বল লাগা, স্বাদে অরুচি এগুলো অন্যতম লক্ষণ।
>> বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জ্বরের সঙ্গে গা-হাত-পায়ে ব্যথা অনুভব থাকে।
>> অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে নাক দিয়ে কাঁচা পানি ঝরা, সর্দি-কাশি দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বরের লক্ষণসমূহ-
>> ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে।
>> জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
>> তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে।
>> শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়।
>> এছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
>> এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’।
>> জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো।
>> পাশাপাশি বমি বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
>> রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে ও রুচি কমে যায়।
>> সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায়। কারও ক্ষেত্রে ২ বা ৩ দিন পর আবারো জ্বর আসে। যাকে বাই ফেজিক ফিভার বলে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর
>> রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-
>> শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
>> এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১-এর লক্ষণসমূহ-
এই রূপটি পূর্ববর্তী রূপগুলোর তুলনায় বেশি সংক্রামক। অনেক ক্ষেত্রে এটি সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ করে না, কিন্তু ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তবে>> নতুন ভ্যারিয়েন্টে সাধারণত হালকা উপসর্গ দেখা যায় সর্দি-কাশি
>> হালকা জ্বর
>> গলা ব্যথা
>> গিঁটে ব্যথা
>> মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা
>> ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস
>> হালকা থেকে মাঝারি শ্বাসকষ্ট
>> নিউমোনিয়া দেখা যায়।
জ্বর হলেই দুশ্চিন্তা করবেন না। তাতে শরীর আরও দুর্বল হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দু-তিন দিনে সমস্যা কমে যাবে। কাজেই সাবধানে থাকুন। উপসর্গের গতি-প্রকৃতির দিকে নজর রাখুন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলুন। বেশি সমস্যা হলে একবার পরীক্ষা করিয়ে নিন।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন