কাণ্ডারিরা কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে

gbn

শিক্ষার্থীদেরকে অভিভাবক–প্রতিষ্ঠান লাঠিয়াল বানাতে চাইলে আর আলাপ নেই; কিন্তু যদি মানুষ বানাতে চায় তবে কথা বলতেই হবে।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক। |

একেবারে সামান্য সামান্য কারণে ছাত্রদের হাতে এই ম্যাচাকার যারা প্রশ্রয় দিচ্ছে তারাও মচকে যাবে—সময় আসুক। হাফ ভাড়া নিয়ে বহু বচসা শুনেছি, দেখেছিও প্রত্যক্ষ। সব দোষ যে বাসের হেল্পার, সুপারভাইজার এবং কন্ট্রাক্টরের—সে কথা বলার সাধ্য নেই। ছাত্ররা এখন সব কাজ করছে, কেবল পড়াশোনা ছাড়া। পরীক্ষার খাতা দেখলে কান্না পায়। ক্লাসের রেসপন্সে লজ্জা লাগে। অথচ কিছু হলেই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরেক বিশ্ববিদ্যালয় ভাঙচুর করে, পরিবহন পুড়িয়ে দেয়! কলেজের সাইনবোর্ড পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায় আরেক কলেজের শিক্ষার্থীরা!

 

শিক্ষার্থীদেরকে অভিভাবক–প্রতিষ্ঠান লাঠিয়াল বানাতে চাইলে আর আলাপ নেই; কিন্তু যদি মানুষ বানাতে চায় তবে কথা বলতেই হবে। তুচ্ছ তুচ্ছ ব্যাপারকে কেন্দ্র করে দলবলসহ যে লয়–প্রলয় ঘটায়, তা তো বিবেক মানতে চায় না। শিক্ষার্থীদের যে শক্তি কল্যাণের পথে পরিচালিত হওয়া উচিত ছিল, তা অকল্যাণে বিনিয়োগ হলে সমাজ আগাতে পারবে? বিশ্বের আর কোথাও এমন নজির আছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা গিয়ে গোটা স্টেশন ভেঙেচুরে দিয়ে আসে! লেখাপড়া রেখে শিক্ষার্থীরা যে–সব কাজে শ্রম দিচ্ছে, সেগুলোই তাদেরকে অল্পদিন বাদে বাসের হেল্পার–সুপারভাইজার বানাবে। রাষ্ট্র নিয়ে স্বপ্ন বুনতে চাইলে শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক পথে আনতে হবে। সন্তান যখন সোজা কথা না বুঝে তখন আরও যত্ন করে বুঝাতে হয়, ধমক দিতে হয়, প্রয়োজনে চড়–থাপ্পড়ও লাগতে পারে। কেবল আদর দিয়ে মানুষ করা এদেশের বাস্তবতায় অসম্ভব। আদর্শহীন প্রজন্ম নিয়ে স্বপ্ন দেখা বেহুদা।

 

সারাদেশেই শিক্ষার্থীরা প্রায় লাগামহীন! তাদের দাপটে সভ্যতা–ভদ্রতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সব ব্যাপারেই নাক গলানো কি শিক্ষার্থীদের কাজ? তাদের মুল কাজে অংশগ্রহণ নাই বললেই চলে। বইয়ের সাথে যোগাযোগ নেই, পরীক্ষার সিজিপিএ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে এবং বেঘোরে স্বপ্ন মারা পড়ছে; অথচ একদল শিক্ষার্থীর চোখ নেশা ও উন্মত্ততায়! ক্ষমতার গন্ধও তাদেরকে পেয়ে বসেছে! এর সুফল দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া ভালো হবে না। দিন কয়েক উপভোগ্য মনে হতে পারে, কিন্তু সামনে কালো দিন। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সবার আগে শিক্ষার্থীদেরকে পুরোদমে ক্লাসরুমে ফেরত পাঠানো দরকার ছিল। নানান যৌক্তিক ও অযৌক্তিক কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এর খেসারত দিচ্ছে গোটা জাতি। অপকর্মের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে শিক্ষার্থীদের নাম উঠেনি! প্রত্যেক অন্যায় ও পাপের প্রায়শ্চিত্ত তো করতেই হবে। একদিন ভাত–কাপড়ের টান পড়বে। আরেকদি দুর্বল বেশে সবলের সামনে দাঁড়াতে হবে। সময়ের যোগ্যতা সময়ে অর্জন করতে না পারলে দায়ভার তো নিতেই হবে।

 

শিক্ষার্থীরা আজকাল পরীক্ষার রাতেও পড়ে পাশ করতে পারে! ক্লাসে না থাকলেও ফরম–ফিলাপ করা যায়! যে কাজে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত থাকা বা ব্যস্ত রাখা উচিত ছিল, সেখানে ঢিলেমির সুযোগে পড়াশোনার বাইরের সব আসরে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি আছে। মারামারি তাদের কাছে উৎসবে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা দেখানো এখন হালের ট্রেন্ড! একজনের সাথে কারো কোনো ঝামেলা হলে ঘটনা না জেনেই, সত্য–মিথ্যা বাছাই না করেই ভীমরুলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ার চিত্র সারাদেশে। লাইব্রেরিতে মৌমাছির মতো ছুটে যাওয়া, রিডিং রুমে বই হাতে কচ্ছপের মতো বসে থাকা—এসব এখন শিক্ষার্থীদের স্বভাববিরুদ্ধ কাজ! তারা রাজনীতি যতটা বোঝে, দায়িত্ব–কর্তব্য ততটা বোঝে না। নিজের ও সময়ের গুরুত্ব তো বোঝেই না। সমাজের সুস্থ ও স্বাভাবিক নরমসের অনেককিছুই তারা মানে না।

 

যারা শিক্ষার্থীদের অন্যায় আবদার ও কর্মকাণ্ডে আদর দিয়ে বাঁদর বানাচ্ছে, তাদেরকেই একদিন বাঁদরনাচ নাচতে হবে! শিক্ষার্থীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, দায়িত্ব ও পরিধির বাইরের এই বিচরণ একদিন চরমভাবে ভোগাবে। ৫ আগস্টের মহানায়কদের পরবর্তীকালের অনেক কর্মকাণ্ডই চরম বিতর্ক ও সাক্ষাৎ ঘৃণার উদ্রেক করছে। একদিকে বাবা–মায়ের স্বপ্ন ধ্বংস হচ্ছে, আরেকদিকে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দুর্বল হচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশের যারা কাণ্ডারি, তারা যদি কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যস্ত রাখে তবে জাতির সামনের দিনগুলো সুদিন হবে না। শিক্ষার্থীদের যত দ্রুত শিক্ষার্জনমুখী করা যাবে, জাতির মুখচ্ছবি তত দ্রুত উজ্জ্বল হবে।

 

স্পষ্ট সিদ্ধান্ত থাকার পরেও যারা হাফ ভাড়া নিতে তালবাহানা করে, তাদের আইন ও কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত! শুধুই হাফ ভাড়া নাকি আরও দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের অংশ—তাও বিবেচনায় রাখা আবশ্যক। দুনিয়ায় কোনো কিছুতেই কার্য–কারণ সম্পর্ক অস্বীকারের সাধ্য কারোরই নেই। শিক্ষার্থীরা তো সবার সন্তানও। একটু না হয় আদর–ভালোবাসা বেশিই পেল। ভালোবেসে যা পারা যায়, জোরজবরদস্তি ও দাপট দেখিয়ে তা কল্পনাও করা যায় না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০ টাকা ভাড়া কম নিলে তা তো রাষ্ট্রেই বিনিয়োগ। আমরা কেবল নগদ পেতে গিয়ে অধিকাংশ হারিয়ে ফেলি। সকল পক্ষের আরও সংযত হওয়া উচিত। এখানে আসলে ভালোতে কেউ কাউকে ছাপিয়ে যেতে পারে না, তবে মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপনে সবাই সবাইকে ছাপিয়ে যায়। আমাদের সার্বিক বোধোদয় হোক। জনগণ শান্তিতে থাকুক এবং রাষ্ট্রটা বাঁচুক।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন