‘ঈদুল আযহা’র যতই এগিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার পশুর হাটগুলো। প্রচুর পরিমাণ পশু থাকলেও হাটে ক্রেতা কম থাকলে, বেশি পশু বিক্রি হচ্ছে খামারগুলোতে।
এবারের ঈদুল আযহায় বেসরকারিভাবে ৯ হাজার পশু চাহিদা থাকলেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৬০৫টির। ক্রেতাদেরকে হাটমুখী করে নিজেদের হাটে নেওয়ার জন্য পশুর হাটগুলোর ইজারাদার ও পশু বিক্রেতারা ঘোষণা করছেন নানান অপারের।
৪৩৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক গরুর খামার ও ১৫টি ছাগলের খামার রয়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে বিশ্বনাথে হাট বাজার রয়েছে ৩৯টি। তবে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩টি এবং অস্থায়ী ৪টি। সব মিলিয়ে ৭টি পশুর হাট রয়েছে। প্রবাসী অধুষিত হওয়ায় ঈদুল আযহায় কোন কোন পরিবারের পক্ষ থেকে ৩-৪টি পশু কোরবানি দেওয়া হয়ে থাকে। সেই তুলনায় ৪৩৮টি গ্রামে গড়ে কমপক্ষে ২০টি করে গরু-ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়। ফলে কোরবানির পশুর পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৭৬০টি। আর চাহিদার তুলনায় কোরবানির জন্যে প্রায় ১৫ হাজারেও বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া প্রস্ত‚ত করেছেন উপজেলার পশু খামারি ও বিক্রেতারা।
বিশ্বনাথ পৌরসভার পুরাণ বাজারস্থ পশুর হাট বুধবার (৪ জুন) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পশুর হাটে ‘গরু-ছাগল ও ভেড়া’ প্রচুর পরিমাণে উঠেছে। যা হাটের নির্ধারিত সীমানার এরিয়া ছেড়ে চলে এসেছে বাজারের পূর্ব দিকে মূল সড়ক পর্যন্ত। ক্রয়-বিক্রয়ও হচ্ছে প্রচুর পরিমানে। এরই মাঝে নিজের শখের গরু ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ক্রয় করলেই সাথে একটি ছাগল ফ্রি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পৌর এলাকার জাহারগাঁও গ্রামের ইব্রাহিম আলী নামের এক গরুর মালিক। এমন চমকপ্রদ ঘোষণাটি বার বার মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন ইজারায় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। সেই ঘোষণার সাথে সাথে বাজারের ইব্রাহিমের গরুটির কাছে ভীড় করছেন ক্রেতা ও উৎসুক জনতারা। প্রথম দিকে তিনি নিজের শখের গরুটির মূল্য ২ লাখ টাকা চাইলেও বুধবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত তার গরু দাম হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
বিগত বছরগুলোতে বিশ্বনাথ পুরাণ বাজারস্থ পশুর হাটে ইজারাদাররা হাজারে ৪০ টাকা করে কিংবা গরু প্রতি ১ হাজার টাকা করে চিট নিলেও, এবছর ক্রেতাদের হাটমুখী করে তুলতে নতুন ইজারাদার গরু (যে কোন দামের) প্রতি ৫শত টাকা করে চিট নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলেই অন্যান্য বছরের তুলনায় উপজেলার সর্ববৃহৎ ওই পশুর হাটটিতে বিক্রেতারা বেশি করে পশু নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রি করার উদ্দেশ্যে। তবে বাজারের তুলনায় বাড়ি ও খামারেই পশু বিক্রি হচ্ছে বেশি। বড় গরুর চেয়ে মাঝারী ও ছোট গরুর চাহিদা ক্রেতাদের মধ্যে বেশি।
বিশ্বনাথ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস শহিদ হোসেন বলেন, বেসরকারিভাবে ৯ হাজার হলেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৫ হাজার ৬০৫টি। এরমধ্যে উপজেলার নিবন্ধিত ৯৮টি গরুর খামার ও ৪টি ছাগলের খামারে কোরবানির জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৫হাজার ৮৯৪টি পশু। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৬৫টি ষাঁড়, ২৫৫টি বলদ, ৩১৭টি গাভী, ১৫টি মহিষ, ১ হাজার ৫২৮টি ছাগল এবং ১১৪টি ভেড়া রয়েছে।
বিশ্বনাথ পৌরসভার পুরাণ বাজার হাটে বিক্রি করার জন্য নিজের শখের গুর নিয়ে আসা ইব্রাহিম আলী জানান, বিগত ৩ বছর ধরে লালন-পালন করা নিজের শখের গরুটি বিক্রি করার জন্য বাজারে নিয়ে এসেছি। শখের গরুটির দাম চাইছি ২ লাখ টাকা। তবে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেলে বিক্রি করে দেব। আর ওই দামে গরুটি যিনি কিনবেন গরুর সাথে তাকে একটি ছাগল ফ্রি উপহার দেব।
একই বাজারে আসা আবুল কালাম নামের এক কৃষকের বলেন, পশুর তুলনায় বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি একে বারেই কম। সঙ্গে। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ৭টি গরু নিয়ে ওই পশুর হাটে আসেন তিনি। কিন্তু সারাদিনে একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। তার প্রতিটি গরুর দাম প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকারও উপরে। গত কয়েক দিনে উপজেলার আরও ২টি হাট (পীরের বাজার ও বৈরাগী বাজার) ঘুরে এসেছেন তিনি। যে দু’একজন ক্রেতা আসেন তারা গরুগুলোর মূল্য ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা দাম করেছেন। এই দামে বিক্রি করা হলে তার লোকসান হয়ে যাবে।
উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের বৈরাগী বাজারস্থ পশুর হাটে কথা হলে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টুকেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও এনায়েত উল্লাহ এগ্রো ফার্মের মালিক আমির আলী বলেন, হাটগুলোর ভাও ঘুরে দেখার জন্য তিনি এসেছেন। তার খামারে দেশি-বিদেশি ৪৫টি গরু আছে। এরই মধ্যে তিনি খামার থেকে ২৫টি ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকিগুলোর মধ্যে ১৫টি বড় ও ৫টি মাঝারি গরু রয়েছে। তিনি আরোও বলেন, হাটের চেয়ে খামারগুলোতেই বেশি গরু বিক্রি হচ্ছে। আর স্থানীয় কোরবানিদাতারা ৬৫ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে ছোট ও মাঝারি গরু কিনছেন বেশি।
উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের পীরের বাজার বাজারস্থ পশুর হাটে কথা হলে আলীম উদ্দিন জানান, তার খামারে ৭৫টি গরু আছে। এর মধ্যে ১০টি বড় গরু ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা মূল্যের। বাকি ৬৫টি ছোট ও মাঝারী ধরণের। এরমধ্যে ১৫টি মাঝারি ও বড় গরু নিয়ে হাটে এসে একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। অথচ খামার থেকে এরই মধ্যে মাঝারি সাইজের ২৫টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন