অনুসন্ধানী নিউজ :
মৌলভীবাজার শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল কোদালীছড়া। দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় শতাব্দী প্রাচীন খাল ভরাট হয়ে গিয়েছিল। সামান্য বৃষ্টিতে বর্ষায় শহরের অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধতা থাকত।পরিকল্পনা ছিলনা, ছিলনা সঠিক ব্যবস্থাপনার।
এমতাবস্থায় ২০১৬ইং শুরুতে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন মো. ফজলুর রহমান।
জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সাথে রেখে মেয়র শুরুতেই তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলামকে নিয়ে বিআইডিসির মাধ্যমে কোদালীছড়ার পুল থেকে ডাউন ৮ কি:মি: খনন করেন। এরপর জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম আসার পর পৌরসভার মধ্যে থাকা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনেকগুলা বৈঠক হয়। একের পর একের বৈঠকের পর ১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কোদালীছড়ায় ১ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে পরিস্কার পরিচ্ছনতা অভিযান শুরু হয়। এতে জেলা শহরের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রিড়া সংগঠন, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সর্বস্থরের নাগরিক অংশ নেন। পরবর্তীতে পাড়ায় পাড়ায় ও কোদালীছড়ায় উভয় পারে বৈঠক করে দুটি এস্কেলেটর দ্বারা খনন করা হয় কোদালীছড়া। এরপর সম্পন্ন করা হয় গাইড ওয়াল ও ওয়াকওয়ে।
২০১৮ সালের খনন এবং পরবর্তীতে মেয়র মহোদয়ের ধারাবাহিক পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ফলে ২০২৪ ইং পর্যন্ত কোনো জলাবদ্ধতা হয়নি।
মেয়র ফজলুর রহমান প্রতি বছর বর্ষার আগে পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারি,কাউন্সিলরবৃন্দদের নিয়ে শহরের বাইরে ১৮কি:মি.পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করতেন, নিয়মিত করতেন। মোস্তফাপুর, পাগুলিয়া, লামা জগন্নাতপুরে প্রতি বছর বোরো ধান করা হয় কোদালীছড়ায় বাধ দিয়ে। ধান কাটা শেষ হলে পৌরসভাকেই এই বাধগুলো অপসারণ করতে হয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি - জুন পর্যন্ত পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারি, কাউন্সিলরবৃন্দ, মোস্তফাপুর, গিয়াসনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার ও সাধারণ জনগনের সহযোগিতা নিয়ে মেয়র মহোদয় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দুর করতেন। এরপর মেয়র পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়ে পৌরসভার ডাউনে দুই দফায় ৮-৯ কি:মি: খনন করেন। এই খননের পরেই পুরোপুরি জলাবদ্ধতামুক্ত হয় মৌলভীবাজার শহর।
এছাড়া আশপাশের প্রায় ৪০টি চ্যানেল আছে যার পানি মিলিত হয় কোদালীছড়ায়, এতে কচুরিপানায় রয়ে যায় খালে, আর পানি যায় হাইল হাওরে। একারণে পানি প্রবাহের জন্য খনন সহ পরিস্কার নিয়মিত করতে হয়, প্রতি বছরই করতে হয়, ব্যত্যয় হলে, জলাবদ্ধতা হবে শহরে।
শহরের কোদালীছড়া পরিস্কার রাখতে দুটি নৌকায় ৯জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়াও মাঝে মধ্যে পৌরসভার নিজস্ব লেবাররা কোদালী ছড়ার পরিচ্ছন্নতার কাজ করত। এরা পরিস্কার রাখার পাশাপাশি খালে বালুর স্তুর না পরে সেটাও দেখত। বালু থাকলে অপসারণ করত। এবার ৯ জন থেকে ৫ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে কোন কোন ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিছু বরাদ্ধ দিয়ে চেয়ারম্যানদের দিয়ে কাজ করাতেন। কোনো সময় জেলা প্রশাসকও বরাদ্ধ দিয়ে কাজ করাতেন। মৌলভীবাজারের সকল জনপ্রতিনধি, রাজনৈতিক দল কোদালীছড়া কাজে সক্রীয় হয়েছিলেন, দেখেছিলেন, তদারকিও করেছিলেন। জেলার সকল সাংবাদিক২০১৮-২০২৪পর্যন্ত নিউজ করেছিলেন। বিশেষ করে তারা শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার জন্য পৌরসভার ভিতরের সাথে বাইরের কাজের সংবাদও গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতেন।
কোদালীছড়ার পরিবর্তন দেখে নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হোল্ডিং ট্যাক্সে ২ % সারচার্জও দিয়েছিল। এই সারচার্জ দিয়েই খালের পরিস্কার পরিচ্ছনতায় ব্যয় হত।
২০২৫ সালে কেন জেলা শহরে জলাবদ্ধতা? এর কারণ- জনবল কমানো, নজরদারী না রাখা, শহরের বাইরের অংশে বাধ না ভাঙ্গা, কচুরিপানা পরিস্কার না করা। এছাড়া আগে নিয়মিত বাসা বাড়ী থেকে ময়লা নেয়া হলেও এখন অনিয়মিত হওয়া ইত্যাদি।
শেষকথা- যিনি প্রশাসক থাকেন, যিনি মেয়র থাকেন, যিনিই দায়িত্বে থাকুন, কোদালীছড়া পরিস্কার পরিচ্ছনতার জন্য যথা সম্ভব সময় দিতে হবে, তদারকি করতে হবে, প্রয়োজনীয় ব্যয় করতে হবে।
প্রিয় শহর মৌলভীবাজার আমাদের, জলাবদ্ধতামুক্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন