সেই মজনু পেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা মজনু মিয়া ছিলেন টগবগে যুবক। ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে, দেশের জন্য স্বাধীনতা আনবেন। অথচ ৫০ বছরেও মজনু মিয়া যখন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাচ্ছিলেন না, তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অবশেষে সেই মজুন মিয়া পেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট। 

 

সম্প্রতি জাতীয় মুক্তযোদ্ধা কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১২ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বেসামরিক গেজেট প্রকাশ করে। এতে মজনু মিয়ার গেজেট নম্বর ১৯৭০ দেওয়া হয়েছে। নানা প্রতিকুল পেরিয়ে এমন গেজেট পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন তিনি।  

 

মজনু মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামে মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে। একটি গুচ্ছগ্রামে পরিবার নিয়ে কোনোমতে বসবাস তার।  

   

জানা যায়,  মজনু মিয়া ভারতের কাকড়ীপাড়া প্রশিক্ষণ শিবিরের আজিম মাহবুরের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে গাইবান্ধার কামারজানি, কঞ্চিবাড়ী ও দক্ষিণ দূর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্যাপ্টেন হামিদ উল্লার নেতৃত্বে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তার অধিনায়ক ছিলেন আব্দুল হামিদ পালোয়ান। যুদ্ধকালীন ১১ নম্বর সেক্টরে মজনু মিয়ার সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন—আবেদ আলী, সুলতান গিয়াস ও আলতাফ হোসেন। এই বীরের এমন অনেক সফল সাহসী অভিযান হয়েছিল যুদ্ধকালীন সময়ে। দেশ হয়েছিল স্বাধীন। এক্ষেত্রে তৎকালীন সময়ের অধিনায়ক মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী স্বাক্ষরিত দেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র পান মজনু মিয়া। এছাড়া জেলা-উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে তাকে প্রত্যায়নপত্রও দেওয়া হয়।  

 

গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে দুই বছর আগে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আবেদন করেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে সাদুল্লাপুর উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক মজনু মিয়াকে ‘গ’ তালিকাভুক্ত করেন। ওই কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মজনু মিয়ার সনদপত্র থাকলেও ক্রমিক নম্বর নেই। এ কারণে তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই সনদপত্রের অপর পৃষ্ঠায় ক্রমিক নম্বর ছিল। মজনু মিয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আপিল করেন। 

 

পরবর্তীতে গাইবান্ধা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকার সাদুল্লাপুর ইউএনও-র নিকট ডিও লেটার দেন। তৎকালীন ইউএনও রহিমা খাতুন ওই ক্রমিক নম্বর যাচাইয়ের জন্য সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দেন। এর ফলে মজনু মিয়ার যুদ্ধকালীন যাবতীয় কাগজপত্র পুনঃযাচাই-বাছাই করে ক্রমিক নং খুঁজে পান এবং তার নাম তালিকাভুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠান।

 

এসব তথ্য নিশ্চিত করে মজনু মিয়া বলেন, সাদুল্লাপুর উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক আমাকে ‘গ’ তালিকাভুক্ত করায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আপিল করি। এরই প্রেক্ষিতে ফের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে চিঠির মাধ্যমে আমাকে ডাকা হয়। গত বছরে ৬ অক্টোবর গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি। এসময় মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষে আবেদনের কপি ও সকল প্রমানাদি পেশ করা হয়। এরপর গত ১২ মে বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটি বেসামরিক গেজেট পেয়েছি। এখন মহাখুশি আমি। 

 

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, আমার কোন অর্থ-সম্পদ কিংবা কোন জমিজমাও নেই। প্রায় ১৪ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান-নাতী-নাতনী নিয়ে গুচ্ছগ্রামে বসবাস করে আসছি। জীবিকার তাগিদে স্থানীয় একটি ‘ছ’ মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করছি।  

 

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ আলী বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে ১১ নম্বর সেক্টরে মজনু মিয়া সহযোদ্ধা হিসেবে একই সঙ্গে কাজ করেছি। তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ায় অত্যন্ত খুশি হয়েছি।  

 

সাদুল্লাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ আজমী জানান, ইতোমধ্যে মজনু মিয়ার নামে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বটে। তাকে ভাতাভুক্ত করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন